সরকারের যুক্তি কেউ বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘হরতালে সরকারের সহিংস আচরণ থেকে স্পষ্ট যে, সরকারের নৈতিকতার পরাজয় হয়েছে। কারও পায়ের নিচে যদি মাটি থাকে, তার যুক্তি যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তার সহিংস হওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আজ সরকার আমাদের ওপর সহিংস হয়েছে।এতে প্রমাণিত হয়েছে, সরকারের কথা কেউ বিশ্বাস করে না, তাই সরকার সহিংস হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ দাবিতে হরতালের কমর্সুচি শেষে সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার জানে, পুলিশ বাহিনীও তাদের বিশ্বাস করে না, কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন না। ফলে অন্য কেউ যদি প্রতিবাদ করে বসে তাহলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে, এটা ভেবেই তারা প্রতিবাদ দেখলেই হামলা চালায়। আজও তাই করেছে।’ সুন্দরবন বিনষ্টকারী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এ কেবল সুন্দরবন রক্ষার নয়। আমাদের আন্দোলন, দেশ রক্ষার আন্দোলন।’ হরতাল সমর্থনকারীরা সহিংস আচরণ থেকে দূরে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা হরতাল পালন করেছি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে। আমাদের সমর্থনকারীরা একটি বাসেও ইট পাটকেল মারেনি, পটকা মারেনি। কারণ এটাই আমাদের নীতিগত অবস্থান। আমরা দেশের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের জন্য ক্ষতির কারণ, আমরা সহিংসতা করতে রাস্তায় নামিনি।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে আমরা বহু সভা সমাবেশ করেছি, সেমিনার করেছি, গবেষণা করেছি, দেশের প্রধানমন্ত্রী-ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে সুন্দরবনের ক্ষতি না করার জন্য চিঠি দিয়েছি। অবশেষে আজ বাধ্য হয়েই আমরা হরতাল পালন করেছি। এর সবই ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ কেউ হামপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আবার অনেককেই আটক করে থানায় রাখা হয়েছে।’ এ সময় এর তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, সারাদেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। আমরা জেনেছি, আজ ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ক্লাস হয়নি। অফিসের কর্তকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন। আমরা সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আজ স্কুলের শিক্ষকরা রাস্তায় বসে সুন্দরবন বিষয়ে ক্লাস করতে চেয়েছেন কিন্তু পুলিশ তা হতে দেয়নি। হামলা চালিয়েছে।’
এর আগে গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকী বলেন, সরকার ভীত, দুর্বল। আর ভীত বলেই শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচিতে তাদের পোষা পুলিশ বাহিনী হামলে পড়েছে। সরকার দমন-পীড়ন করেছে, এটা তাদের শক্তির পরিচয় নয় বরং দুর্বলতার পরিচয়। আর সরকার দুর্বল বলেই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতালে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের ট্যাস্কের টাকায় রামপালের পক্ষে বিজ্ঞাপন বানিয়ে টিভি চ্যানেলা ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করা হচ্ছে। রামপালের পক্ষে যারা ওকালতি করেন, ‘তাদের টক শোতে বসিয়ে ওকালতি করা হয়েছে। কিন্তু কোনও যুক্তিই খাটবে না। বিশ্বের বহু গবেষণার ফল আমরা হাজির করেছি, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হবে। এ কারণেই আজ এ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকারই গায়ের জোরে ভারতকে খুশি করার জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে বলেই কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’
এর আগে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ তার বক্তব্য শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ২৮ জানুয়ারি বিক্ষোভ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা
/আরএআর/এমএনএইচ/