X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যেভাবে নজরদারি হচ্ছে বইমেলা

আমানুর রহমান রনি
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:৫৯আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৪৪

বইমেলায় প্রবেশের সময় চলে ব্যাপক তল্লাশি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মাঝে মাঝে দর্শনার্থীর চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। বইমেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় এমন পরিস্থিতি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরো ফুটপাতজুড়ে কয়েক গজ পরপর রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আছে সিসি ক্যামেরাও। মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশ মুখে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে তল্লাশি। এই কড়া নিরাপত্তায় খুশি মেলায় আগত  ক্রেতা, দর্শকসহ বইপ্রেমীরা। তবে কেউ কেউ বলেছেন ভোগান্তির কথাও।

রবিবার দিনব্যাপী মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে এমন কড়া নিরাপত্ত ব্যবস্থা দেখা গেছে। বাংলা একাডেমি এলাকায় প্রবেশের পথগুলোতেও চলছে পুলিশের কড়া তল্লাশি। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ তল্লাশি শেষে নিশ্চিত হয়ে তাদের ছাড়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমিতে যেতে শাহবাগ, কার্জন হল ও শহীদ মিনারের সামনের সড়কে দুপাশের ফুটপাতেই পুলিশ অবস্থান করছে।মেলা প্রাঙ্গণসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ মুখগুলোতে সিসি ক্যামেরা, ইউনিফর্মধারী র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সুসজ্জিত আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে  র‌্যাব ও পুলিশের বাড়তি উপস্থিতিতে আস্থা পাচ্ছেন মেলায় আগতরা।

দোয়েল চত্বর ও টিএসসি দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণের দিকে যেতেই পুলিশ অনেককেই তল্লাশি করে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। এরপর বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের সবকটি পথেই বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। আর্চওয়ে পার হলেই হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেকের শরীর ও ব্যাগ  আলাদা-আলাদাভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। মেলার ভেতরেও দল বেঁধে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙখলা বাহিনীর সদস্যরা ।

রবিবার বিকালে বাংলা একাডেমির প্রবেশমুখের আর্চওয়েতে কর্তব্যরত কনস্টেবল আউয়াল হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করছিলেন। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে কী কী নিশ্চিত হওয়া যায় প্রশ্নে আউয়াল বলেন, ‘আমরা মূলত ধাতব বস্তু নিশ্চিত হই। পকেটে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র, চাবির রিং এসব থাকলে তা ধরা পড়ে। এমনকি বেল্টের ধাতব বস্তুও এতে ধরা পড়ে।’

আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টরে বিস্ফোরক ধরা পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরক ধরা পড়ে  না। তবে বিস্ফোরক নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা সব ধরনের ব্যাগ তল্লাশি করি। সিগারেট, দিয়াশলাইসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ মেলায় নিষিদ্ধ।’

মেলা প্রাঙ্গণে র‌্যাব ও পুলিশের আলাদা আলাদা কন্ট্রোলরুম রয়েছে। রয়েছে দুই বাহিনীর ডগ স্কোয়াড। তারাও মেলার নিরাপত্তায় কাজ করছে। মেলা প্রাঙ্গণ, দোয়েল চত্বর ও টিএসসিতে রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের আলাদা ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে দুজন করে সদস্য সবসময় মনিটরিং করেন।

মেলার নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘বইমেলা প্রাঙ্গণের প্রতি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরা কাভারেজের আওতায় রাখা হয়েছে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল মেলার সীমানার বাইরে সোহরাওয়ার্দীর বর্ধিত অংশ পুরো এলাকায় টিনের  বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও বাঁশ দিয়ে আরেকটি বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ টিনের বেষ্টনীর বাইরে ও ভেতরে উভয়পাশে নিরাপত্তায় রয়েছে। ভিড় ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ‘প্রবেশ’ ও ‘বাহির’ আলাদা গেট করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিতে প্রবেশের জন্য দুটি গেট এবং বের হওয়ার জন্য একটি গেট। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য তিনটি গেট ও বের হওয়ার জন্য তিনটি গেট রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের পেছনেই তাদের একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা নাজনীন। তারা ৯ জন বন্ধু মিলে মেলায় এসেছেন। প্রবেশের সময় তাদের প্রত্যেকের ব্যাগ আলাদা করে তল্লাশি করায় প্রবেশ মুখে কিছুটা জটলার সৃষ্টি হয়। এসময় অনেককে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। শামীমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবছর বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এটা ভালো। তবে তল্লাশির কাজ আরও দ্রুত করা দরকার। একজন একজন করে তল্লাশি করায়  অনেক বেশি সময় লাগছে।’

এদিকে মেলায় পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায় অনেকেই নির্দিষ্ট শৌচাগার খুঁজে পাচ্ছেন না। শৌচাগারগুলো নোংরা হয়ে আছে। সেখানেও  দেখা  যায় দর্শনার্থীদের লাইন।

গ্রন্থমেলায় শিশু কর্নার মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য যে কর্নারটি করা হয়েছে, সেখানে কোনও ইট বেছানো হয়নি।ফলে ধুলোয় ওই এলাকায় প্রবেশ করাই মুশকিল। স্টলগুলোও এলোমেলো। যা শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। রায়হান হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী তার দুই সন্তার রাতুল ও রিমনকে নিয়ে কাজীপাড়া থেকে মেলায় এসেছেন। শিশু কর্নারে ঘুরে হতাশ হয়েছে বলেন, ‘শিশু কর্নারে শিশুদের জন্য  কিছুই রাখা হয়নি। ধুলায় এখানে হাটাই যায় না। তাই চলে যাচ্ছি। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কৃত্রিম ঝর্ণা বানানো হলেও সেটি বন্ধ হয়ে আছে।’ তবে নিরাপত্তার বিষয়ে রায়হান হাওলাদার আস্থা প্রকাশ করেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান, তারা মেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। যাতে মেলায় গিয়ে কেউ আস্থাহীনতায় না ভোগেন।

/এআরআর/  এপিএইচ/

আরও পড়ুন: ‘দামি লেখকদের’ সঙ্গেও নিয়ম মেনে চুক্তি হয় না!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হ্যান্ডগ্রেনেড ও অস্ত্রসহ ৪ আরসা সদস্য আটক
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হ্যান্ডগ্রেনেড ও অস্ত্রসহ ৪ আরসা সদস্য আটক
শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য কিরগিজে যাচ্ছেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত
শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য কিরগিজে যাচ্ছেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত
গোটা বাংলাদেশকেই কারাগারে পরিণত করা হয়েছে: ইশরাক
গোটা বাংলাদেশকেই কারাগারে পরিণত করা হয়েছে: ইশরাক
ভারত ও চীনকে যুক্ত করা গেলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত ও চীনকে যুক্ত করা গেলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক