X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘দামি লেখকদের’ সঙ্গেও নিয়ম মেনে চুক্তি হয় না!

উদিসা ইসলাম
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৭:৫৪আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৯

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশকের মধ্যে চুক্তির নিয়ম থাকলেও তা জানেন না অধিকাংশ লেখকই। এমনকি নামি-দামি প্রকাশকরা ‘দামি লেখকদের’ বই প্রকাশেও চুক্তি করতে চান না। তবে দুই একজন প্রকাশক চুক্তি করলেও তা যথাযথ নিয়ম মেনে করেন না। সাধারণত চুক্তিপত্রে কত কপি বই ছাপা হবে, কত শতাংশ রয়্যালটি লেখক পাবেন, কত দিন পর্যন্ত প্রকাশক ওই বই প্রকাশ করতে পারবেন, বইয়ের স্বত্ব কে পাবেন? এসব উল্লেখ থাকা উচিত। বই প্রকাশের আইন নিয়ে যারা কাজ করেছেন তারা বলছেন, অপরিচিত নতুন লেখকদের কথা দূরে থাক, প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই প্রকাশেও যথাযথ নিয়ম মেনে চুক্তি করা হয় না।


বই মেলা কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্ট্রার ও বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা লাখ লাখ টাকা রয়্যালটি পাচ্ছেন তাদের সঙ্গেও সঠিক নিয়মে চুক্ত করা হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের মতো সচেতন ও অতি জনপ্রিয় লেখকও মৌখিক চুক্তিতে কাজ করেছেন। ফলে অনেক হিসেবই পরবর্তীতে পাওয়া যায়নি। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর চুক্তি প্রচলন করার দায়িত্ব তারা ঠিকমতো তা পালন করে না। দু’একটি প্রকাশনী সিভিল আইনজীবীদের দিয়ে চুক্তি করায়। কিন্তু তারা কপিরাইট বা চুক্তি বিষয়ে আদৌ জানেন না।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দু’একটি প্রকাশনী সংস্থা ছাড়া কেউই লেখকদের সঙ্গে চুক্তি করে না। সাধারণত নতুন বই প্রকাশে আগ্রহীরা চুক্তির বিষয়ে না জেনে শুধু মৌখিক চুক্তিতেই বই প্রকাশে রাজি হয়। ফলে তারা রয়্যালটির টাকা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে পরস্পরের প্রতি অভিযোগ করলেও কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে কবি ও প্রাবন্ধিক আবিদ আনোয়ার বলেন, ‘লেখক-প্রকাশকের মধ্যে সাধারণত লিখিত চুক্তিপত্র হয় না, আমার সঙ্গেও হয় না। তবে মৌখিক চুক্তি হয়। সাধারণত প্রথম সংস্করণ শেষ হওয়ার পর প্রকাশকরা আমাকে রয়্যালটি দেন। যার পরিমাণ খুবই কম।’
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত চুক্তির আগে বই প্রকাশ না করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘লেখকদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করলেও অন্যরা করে না। লিখিত চুক্তি ছাড়া লেখকদের বই প্রকাশে রাজি হওয়া উচিত না।’
বিশিষ্ট লেখকদের সঙ্গেও প্রকাশকদের চুক্তির বিষয়ে গবেষক ও সাহিত্যিক শাকুর মজিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দু’টি বইয়ে চুক্তি হলেও বাকি সাতটির ক্ষেত্রে প্রকাশকের সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি।’
চুক্তি না করা প্রকাশক না লেখকের অবহেলা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি উভয়েরই দায়িত্ব। যেকোনও যৌথকাজে চুক্তিপত্র থাকা জরুরি।’
দুই-একজন প্রকাশক ছাড়া বই বিক্রি করে বেশির ভাগ প্রকাশকই খরচ তুলে আনতে পারেন না উল্লেখ করে সন্দেশ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের হাতে তুলে দেওয়ার আগে চুক্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু উভয়পক্ষই চুক্তিতে অনিহা দেখান। এখানে কেবল প্রকাশককে দোষারোপ করলে চলবে না।’
এ বিষয়ে প্রকাশনা সংস্থা সংহতির পক্ষ থেকে ফিরোজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে বেশিরভাগ পাণ্ডুলিপি আসে। তখন দম ফেলার সময় থাকে না। চুক্তির কাজটা আমরা করি সাধারণত বইমেলা শেষ করে, মার্চ মাসে। লেখকদের পাওনা তখনই পরিশোধ করা হয়।’
লেখক ও ‘পাণ্ডুলিপি’ সম্পাদক রাখাল রাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুক্তির বিষয়ে লেখক-প্রকাশক উভয়ই অসচেতন। প্রকাশকদের পেশা আছে, তবে পেশাদারিত্ব কম। লেখকেরা বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাই এবং অভিভাবক হয়ে প্রকাশকের কাছে যান। তাই চুক্তির কথা বলতে তারা লজ্জা পান। মতান্তর ঘটলে বন্ধু, ভাই এবং অভিভাবকের দায়িত্ব ভুলে পথে-ঘাটে গালাগালি করতে থাকেন। বিষয়টা যে লেনদেনের ব্যবসার সেটা লেখক-প্রকাশকরা শুরুতে ভুলে যান।’
/এসএনএইচ/আপ-এমও/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
বান্দরবানে দুই উপজেলা নির্বাচনে জয় পেলেন যারা
বান্দরবানে দুই উপজেলা নির্বাচনে জয় পেলেন যারা
আওয়ামী লীগের যৌথসভা শুক্রবার
আওয়ামী লীগের যৌথসভা শুক্রবার
সড়কে নিম্নমানের বিটুমিন: ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ মহাসড়ক পরিদর্শন দুদকের
সড়কে নিম্নমানের বিটুমিন: ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ মহাসড়ক পরিদর্শন দুদকের
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা