মুক্তামনির সুস্থ হতে আরও ছয়টি অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেন। শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে অস্ত্রোপচারের পর পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার পাশাপাশি কথা বলেন এখানকার বার্ন ইউনিটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম।
এদিন সকাল ৯টার দিকে মুক্তামনির অস্ত্রোপচার শুরু হয়। ২০ জন চিকিৎসকের একটি দল এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অস্ত্রোপচার করে তার হাত থেকে তিন কেজি মাংসপিণ্ড ফেলে দিয়ে সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘অপারেশন সফল হয়েছে। মুক্তামনি ভালো আছে। তার হাতের ডিজিজ পোরশন (রোগাক্রান্ত অংশ) কেটে ফেলতে সক্ষম হয়েছি আমরা। তবে একটি অপারেশনেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে না। এজন্য আরও অন্তত ছয়টি অপারেশন করা দরকার। তার জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলেছে। এ সাফল্য আমাদের একার নয়। বার্ন ইউনিটসহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের (এনআইসিভিডি) সমন্বিত সাফল্য এটি। তার হাত ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রাথমিক সাফল্য বললেও এটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ইটস লং ওয়ে টু গো।’
মুক্তামনির জীবনের ঝুঁকি কিংবা তার শরীরে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের এই চিকিৎসকের ভাষ্য, ‘ঝুঁকিমুক্ত কখনও বলা যাবে না। তবে অবশ্যই ঝুঁকি কমে এসেছে।’
বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেছেন, ‘ঝুঁকি অবশ্যই আছে।’ মুক্তামনির আবারও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তার হাতের বেশিরভাগ অংশ ফেলে দিয়েছি। আপনারাও জানেন ওর শরীরের বেশকিছু অংশে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সেগুলো আমরা অপসারণ করবো। এটুকু বলতে পারি, হাতের রোগাক্রান্ত যেটুকু অংশ ফেলে দিয়েছি সেখানে আর এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা নেই।’
মুক্তামনি কেমন আছে এ প্রশ্নের জবাবে ডা. আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম মুক্তামনি তার চেয়েও ভালো আছে। তবে সে ঝুঁকিমুক্ত নয়। অন্তত ৫-৬ সপ্তাহ সে আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।’
পরবর্তী অস্ত্রোপচার কবে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক বলেন, ‘একেকজন মানুষের শরীরের মেকানিজম একেক রকম। ওর একটা অপারেশন হয়েছে। শরীরের কিছু ডিঅ্যারেজমেন্ট আছে। মুক্তামনির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী অপারেশন কবে করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ড. জুলফিকার লেনিন বলেন, ‘মুক্তামনির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সবসময় খোঁজখবর রেখেছেন। তিনি আজকের বিষয়ও সবকিছু জানেন। আমাদের দিক থেকে যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’
এরপর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মুক্তামনির সফল অস্ত্রোপচারের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তামনির বাবা মো. ইব্রাহিম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইসিইউতে গিয়ে দেখি আম্মুজান চোখ বন্ধ করে আছে। আমি আম্মুজান বলে ডাক দিতেই মুক্তামনি চোখ খোলে। কেবল তার চোখ নয়, আমার দুনিয়াটাই যেন আলো পেলো।’
অস্ত্রোপচার শেষে মুক্তামনিকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ইব্রাহিম হোসেন আরও বলেন, “চোখ খুলে আমার আম্মুজান বলে, ‘আব্বা হাতের ভেতরে জ্বালাপোড়া করে।’ সব ঠিক হয়ে যাবে আশ্বাস দেওয়ার পর সে পানি খেতে চাইলো। কিন্তু অপারেশনের পরপরই পানি খেতে দেওয়া যাবে না বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।”
মুক্তামনি দুর্বল হয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে তার বাবা বললেন, “আমার মেয়ের মতো শক্ত মেয়ে আর দেখিনি। ৯ বছর ধরে এই হাত বয়ে বেড়াচ্ছে সে। কোমরে এই হাতের ভার দিয়ে সে একা নিজে নিজে গোসল ও টয়লেটে যেতে চাইতো। আর আজ (শনিবার) সে অপারেশনের আগে আমাকে বলে, ‘আব্বা তুমি টেনশন কইরো না। আমার হাত ভালো হয়ে যাবে।’ কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম সে নিজেই টেনশন করছে। এ কারণে রাতে ঘুমাতে পারেনি। বায়োপসি করার পর থেকেই কিছুটা দুর্বল হয়ে যায় সে। কিন্তু আমাদেরকে ঠিকই মেয়েটা সাহস দিয়ে গেছে।”
/জেএ/এসটি/জেএইচ/
আরও পড়ুন:
অপারেশন শেষ, ভালো আছে মুক্তামনি