X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৯২ সালের চুক্তিতেই কেন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৭ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৫৭আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:০১

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দলে দলে প্রথমবার পালিয়ে আসে ১৯৭৮ সালে। তখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তিস্বাক্ষর হয়। এর অধীনে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন হয়েছিল।

১৯৯২ সালে আবার দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। ওই সময় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আরেকটি সমঝোতা হয়। এর অধীনে ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে যায় মিয়ানমারে।

২০১২ সালে রাখাইনে জাতিগত দাঙ্গা এবং ২০১৬’র অক্টোবর ও চলতি বছরের আগস্টে মিয়ানমারের পুলিশ ক্যাম্পে ‘হামলা’র ঘটনার জের ধরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চলছে দুই দেশের মধ্যে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের চুক্তিকে ভিত্তি হিসেবে ধরতে চায়, তবে তাতে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের। মিয়ানমার ১৯৯২ সালের চুক্তিকে কেন ভিত্তি হিসেবে ধরতে চায় তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের।

এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারে বাংলাদেশের প্রাক্তন ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৯২ সাল ও বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কারণে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালের চুক্তির বাইরে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নতুনভাবে সমঝোতা করতে চায় বাংলাদেশ।’

কীআছে ১৯৯২ চুক্তিতে

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমার সরকার সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাচাই প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের যেসব বাসিন্দার উপস্থিতির বিষয়টি শরণার্থী নিবন্ধন কার্ড দ্বারা বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে পারবে, তাদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তালিকা যাচাই শেষে যাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব কার্ড ও এ সম্পর্কিত মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নথি এবং যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে ঠিকানা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে, তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, ‘একজন রোহিঙ্গা ওই সময় তার ঠিকানা বলতে পারলে সে যাচাই-বাছাইয়ের যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা— এর কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। অর্থাৎ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নিলেও অভিযোগের কোনও সুযোগ ছিল না।’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের প্রাক্তন ডিফেন্স অ্যাটাশে আরও বলেন, ‘১৯৯২ সালের সমঝোতাকে মেনে নেওয়া হলে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেমন পুরো নিয়ন্ত্রণ মিয়ানমারের হাতে থাকবে, তেমনই সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকায় তারা এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবে। ১৯৯২ সালের পর ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তারা ১৩ বছর সময় নিয়েছে।’

চীনে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মিয়ানমারের সদিচ্ছা। তারা দু’বার সমঝোতা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এবারও রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক নজরদারি ও চাপ বজায় না থাকলে তারা আবার পালিয়ে আসবে।’

১৯৭৮ সালের চুক্তিতে কী আছে

ঢাকায় তিন দিনের বৈঠকের পরে ১৯৭৮ সালের ৯ জুলাই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। এতে সই করেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব তবারক হোসেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার উ টিন অহ্ন। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারে আইনগতভাবে বসবাসকারী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। পরের কোনও সমঝোতায় রোহিঙ্গাদের আইনগত কোনও মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

১৯৭৮ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের বিভক্ত করা হয় তিন ভাগে। প্রথম ভাগে ছিল জাতীয় নিবন্ধন কার্ডধারী রোহিঙ্গা ও তাদের পরিবারের সদস্য। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার।

পরের ভাগে ছিল এমন রোহিঙ্গারা যাদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল না। কিন্তু কোনও না কোনও কাগজ দেখিয়ে তারা প্রমাণ করতে পারতো যে তারা রাখাইনে বসবাস করতো। সরকারি খাতে জমা দেওয়া অর্থের রশিদ কিংবা সন্তানদের স্কুলে পড়ানোর কোনও সনদের মতো ডকুমেন্টস এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তৃতীয় ভাগে রাখা হয়েছিল এমন রোহিঙ্গাদের যাদের কোনও ধরনের কাগজ বা ডকুমেন্টস ছিল না। কিন্তু তারা তাদের ঠিকানা বা অন্যকিছুর প্রমাণ দিতে সক্ষম।

১৯৭৮ সালের চুক্তিতে বলা ছিল, ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ও ছয় মাসের মধ্যে গোটা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

আরও পড়ুন: 
নিজেদের অর্থ যেভাবে রক্ষা করছেন বিত্তশালী রোহিঙ্গারা

 

/টিআর/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আছিম বাসে আগুন দেয় ছাত্রদলের নেতারা: সিটিটিসি
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আছিম বাসে আগুন দেয় ছাত্রদলের নেতারা: সিটিটিসি
গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
পুণ্যস্নানে হাজারো ভক্তের ভিড়, জমজমাট লোকজ উৎসব
পুণ্যস্নানে হাজারো ভক্তের ভিড়, জমজমাট লোকজ উৎসব
বউ-শাশুড়ির ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেলো একজনের
বউ-শাশুড়ির ঝগড়া থামাতে গিয়ে প্রাণ গেলো একজনের
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস