X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিশাহারা সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা!

শাহেদ শফিক
২৩ নভেম্বর ২০১৭, ০২:৪১আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৫৪

 

সিএনজি অটোরিকশা (ফাইল ছবি) সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ঢাকা মহানগরীর সাধারণ যাত্রীরা। নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে সিএনজিচালকদের অনীহা ও সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করাসহ বিভিন্ন কারণে নগরবাসী এই পরিবহন খাতের ওপর ক্ষুব্ধ। যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়াও মিটার অনুযায়ী  ভাড়া আদায়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি সরকার। এ সুযোগে  সিএনজি অটোরিকশাচালকরা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। এমন পরিস্থিতিতে সিএনজি-অটোরিকশার নৈরাজ্য থেকে মুক্তি দিতে ‘উবার’, ‘পাঠাও’সহ কয়েকটি অ্যাপসনির্ভর পরিবহন সার্ভিস দিচ্ছে যাত্রীদের চাহিদামাফিক সেবা। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সিএনজি-অটোরিকশা বাদ দিয়ে ঝুঁকে পড়ছেন অ্যাপসনির্ভর পরিবহন সার্ভিসের দিকে। আর দিনে দিনে সিএনজি অটোরিকশায় প্রতি সাধারণ যাত্রীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। এতে যাত্রী না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা। তারা ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে অ্যাপসভিত্তিক সার্ভিসগুলোকে অবৈধ দাবি করে, তা বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। এতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় সমালোচনা ঝড় ওঠে। অনেকেই সিএনজি চালিত অটোরিকশা বর্জনের ঘোষণা দেন।

সাধারণ যাত্রীদের সিএনজি-অটোরিকশা বর্জনের ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েছেন আন্দোলনের ডাক দেওয়া শ্রমিক নেতারা। ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি কয়েকদিন যাওয়ার পর এখন সুর পাল্টিয়েছেন তারা। বলছেন,  ‘উবার’-‘পাঠাও’ বন্ধের দাবি করছেন না। তারা চান ‘উবার’, ‘পাঠাও’কে সুষ্ঠু নীতিমালার আওতায় আনা হোক। একইসঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশাকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

ঘোষিত কর্মসূচি ও দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটি’র সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা ‘উবার’ বা ‘পাঠাও’ বন্ধের দাবি করছি না। আমরা বিআরটিএ’র অনুমোদনহীন সার্ভিস বন্ধের কথা বলেছি। আমরা চাই, সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে অ্যাপসার্ভিস চালু হোক। কিন্তু আমাদের দাবিতে এখনপর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন চলছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরীর জন্য সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া দেয় সরকার। এতে প্রথম দুই কিলোমিটার পর্যন্ত ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি এক মিনিট অবস্থানের জন্য (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) দুই টাকা। মালিকের জমা ৯০০ টাকা। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর বলা হয়েছে, ওই দিন থেকে সব সিএনজি মিটারে চলবে। কিন্তু চালকরা সে সিদ্ধান্ত না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে আসছেন।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিএনজি-চালকরা আইন মানছেন না। মিটারে না চলে তারা চুক্তিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। কেউ নিজের মর্জিমাফিক ব্যবসা করতে চাইলেই তাকে সুযোগ দেওয়া সরকারের কাজ নয়, সরকারের কাজ এর নিয়ন্ত্রণ করা। জনগণ যেখানে সস্তা পাবে, সেখানেই যাবে, এটাই স্বাভাবিক। সিএনজিচালকরা আইনবিরোধী যে দাবি তুলেছেন, তার জন্য তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’  

একই কথা বললেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাত্রী বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। এ জন্য তারা এখন দিশাহারা। মালিকরা চাইলে চালকদের থেকে অতিরিক্ত জমা না নিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় পরিবহন পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু তারা তা করছেন না। কেউ নিজের মর্জিমতো ব্যবসা করতে চাইলে তাকে সুযোগ দেওয়া সরকারের কাজ নয়। সবাইকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে।’

জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিএনজি চালকদের ৮ দফা দাবির কোনোটির সঙ্গে আমরা একমত নই। তারা অতীতেও এ রকম দাবি তুলে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করেছেন। তখন তারা বলেছেন, যাত্রীসেবার মান বাড়াবেন, শৃঙ্খলা ফেরাবেন। অতীতেও তারা তাদের দেওয়া অঙ্গীকার বার বার ভঙ্গ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘অটোরিকশাগুলো যাত্রীদের যেকোনও গন্তব্যে যেতে বাধ্য। কিন্তু তারা সব গন্তব্যে যান না। রাস্তার ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকেন। তাদের যদি পার্কিং সুবিধা দেওয়া হয়, এ নৈরাজ্য আরও বাড়বে। পার্কিংয়ে বসে ঘুমাবেন। তাদের নৈরাজ্যের সুযোগে যাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা যদি মিটারে চলাচল করতেন, ‘পাঠাও’ বা ‘উবার’এর মতো সার্ভিসের প্রয়োজন হতো না। তারা আমাদের ঘরে এসে নিয়ে যাচ্ছেন। এ রকম সেবাই  তো আমাদের দরকার। সুতরাং আমরা মনে করি, সিএনজিচালকদের দাবি গণবিরোধী। সরকারকে অনুরোধ করব, তাদের দাবিগুলো যেন না মানে।’’

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘সিএনজি চালকদের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে যাত্রীরা যখন এখন কম খরছে হাতের মুঠোই সেবা পাচ্ছেন, তখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সেজন্যই তাদের এমন আচরণ। সিএনজিচালকদের আন্দোলনে যদি সরকার সাড়া দেয়, তাহলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়বে।’

এদিকে, যাত্রী হারিয়ে মালিকদের জমার টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখন অ্যাপের আওতায় আসার কথা বলছেন সিএনজি চালকরা।  

এ বিষয়ে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরাও চাই, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাত্রীরা সেবা পাক। কিন্তু আমরা তো সিএনজি-অটোরিকশার মালিক না। আমরা চাইলেও কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারব না। এজন্য মালিকদের আগ্রহী হতে হবে। সরকার যদি মালিকদের বাধ্য করে, তাহলেই যেকোনও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।’ তবে এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগও যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা