‘একই যোগ্যতা নিয়ে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।’ শনিবার রাত ১১টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকের সঙ্গে এ কথাগুলো বললেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে আসা সহকারী শিক্ষক মইনুর রহমান।
মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় শিক্ষকদের। আর সেই শিক্ষকরাই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। বেতন বৈষম্য নিরসনে আমরণ অনশন শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তারা এ আমরণ অনশন শুরু করেন।
পুরুষদের পাশাপাশি নারী সহকারী শিক্ষকরাও রাতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান করছেন। ফেনীর পরশুরাম থেকে এসেছেন সহকারী শিক্ষিকা হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘কোনও ছাত্রের দাঁত নড়লেও তারা ছুটে আসেন আমাদের কাছে। সব আপদ-বিপদে আমরা ছাত্রদের সবচেয়ে বেশি কাছে থাকি। অথচ আমরাই এত বড় বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।’
এই রাতেও শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান সম্পর্কে হালিমা খাতুন বলেন, ‘বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের ফেলে ঢাকা এসে আন্দোলন করছি। এটা নিশ্চই বিপদ। আগে বিপদে পড়তে হয়,তাহলেই না বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়া যায়। আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।’
রাত ১১টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় দেখা গেছে, এই শীতের মধ্যেও পাঁচ শতাধিক শিক্ষক সেখানে অবস্থান করছেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন পৌনে চার লাখ শিক্ষক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হয়েছেন। দাবি আদায়ের আন্দোলনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন তারা। হাতে গোনা কয়েকটি পলিথিনের তাবুর ব্যবস্থা করা হলেও বেশির ভাগ শিক্ষক শুয়ে-বসে আছেন ত্রিপল বা পলিথিন বিছিয়ে। শীত নিবারণে গায়ে জড়িয়েছেন সঙ্গে নিয়ে আসা পাতলা চাদর। আর যারা তাও নিয়ে আসেননি তারা আন্দোলনে ব্যবহৃত ব্যানার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছেন। যাদের শুয়ে থাকার ব্যবস্থা নেই, তারা শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় বসে থেকে বা হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাচ্ছেন।
অনশনের কারণ সম্পর্কে আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, ১৯৭৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে এক ধাপ পার্থক্য ছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এসে দুই ধাপ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে তিন ধাপ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডেই পড়ে রয়েছেন। এছাড়া, প্রস্তাবিত গ্রেডে প্রধান শিক্ষকদের আরেক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেড করার প্রস্তাব রয়েছে। এই বৈষম্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন তারা।
বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর-আলম সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এই দাবি নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছি। বিভিন্ন সময় আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই আজ (শনিবার) থেকে আমরা আমরণ অনশনে বসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বেতন বৈষম্য নিরসন করা না হলে সামনে পাঠ্যবই উৎসবে কোনও সহকারী শিক্ষক অংশগ্রহণ করবো না।’
আরও পড়ুন: