X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে ফুল ফুটলো না ডিএসসিসি’র সড়ক ডিভাইডারে

শাহেদ শফিক
০৬ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫০আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৮, ০৯:০১

সড়ক ডিভাইডারে রোপণ করা গাছে ফুল ফোটেনি (ছবি: শাহেদ শফিক) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সড়ক ডিভাইডারের ‘বাগান বিলাস’ প্রকল্পে ফুল ফোটেনি বিভিন্ন কারণে। পুরো প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার নেপথ্যে পরিবেশগত কারণ ছাড়াও কর্মকর্তাদের অনিচ্ছার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় কার্যকর কোনও উদ্যোগ না নিয়ে সড়ক ডিভাইডার বিষয়ে আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ায় কর্মকর্তাদের অনিচ্ছার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে এর মধ্যে লোকদেখানো কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ নগরবাসী ও পরিবেশবাদীরা।

সড়ক ডিভাইডারে রোপণ করা গাছে ফুল না ফোটায় ডিএসসিসি’র কর্মকর্তারা ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতিকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ— কর্মকর্তাদের অনিচ্ছায় সিটি করপোরেশন এই প্রকল্পে সফলতা পাচ্ছে না। তাদের মন্তব্য, ‘ঢাকার পরিবেশ এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি যে, এর কোথাও গাছ রোপণ করা হলে তাতে ফুল ফুটবে না। পরিচর্যা করে যদি বাড়ির ছাদের সামান্য টবের মাটিতে ফুল ফোটানো যায় তাহলে সড়ক ডিভাইডারের মাটিতে কেন ফুল ফুটবে না? করপোরেশনের অবহেলাই এর মূল কারণ। এর সঙ্গে জড়িত এই সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। তারা নিজেরাই চান প্রকল্পটি ব্যর্থ হোক!’

এ অবস্থায় প্রকল্পটি নিয়ে আর সামনের দিকে এগোচ্ছে না ডিএসসিসি। এজন্য আগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সড়ক ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্প্রতি এজন্য চিঠির মাধ্যমে ব্যাংক, বীমা, মোবাইল ফোন অপারেটর, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলালের সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়ক ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকার রোড ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হতো। কিন্তু ২০১৬ সালের জুনে ডিএসসিসি’র সড়কগুলো সবুজায়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে এক বছর মেয়াদি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের জুনে। কিন্তু এখনও তা সম্পন্ন হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সড়ক ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেন। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর আগে হাতে নেওয়া এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপশাহ মাজার থেকে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়, বঙ্গবাজার থেকে শেরাটন হোটেল, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়, রমনা থানার সামনে থেকে সবজিবাগান এলাকা ও মতিঝিলের বলাকা চত্বর এলাকা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল— মেয়াদ শেষে সড়কগুলোতে ফুলের সৌন্দর্য শোভা পাবে, ছড়াবে সৌরভ। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ভিন্ন। ফুল ফোটা তো দূরের কথা, অধিকাংশ স্থানে গাছই বেঁচে থাকছে না। আবার কিছু গাছ থাকলেও অনেক চেষ্টার পরেও ফুল ফুটছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে ভিন্ন কারণ।

মেয়র সাঈদ খোকন যে সড়কগুলোর ডিভাইডারকে প্রকল্পের আওতায় ফুল ফোটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন একসময় সেইসব স্থানে ডিএসসিসি’র রাজস্ব বিভাগের বিউটিফিকেশন সেল থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা হতো। তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নগর ভবনে আবেদনের মাধ্যমে একেকটি এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব নিতো একেকটি প্রতিষ্ঠান। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব দু’চারটি বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে সেইসব প্রতিষ্ঠানকে সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব দিতেন। প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু বিজ্ঞাপন দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পুষিয়ে নিতো।

সড়ক ডিভাইডারে রোপণ করা গাছে ফুল ফোটেনি (ছবি: শাহেদ শফিক) মেয়রের উদ্যোগের ফলে ডিএসসিসি’র আগের সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে মাথায় হাত পড়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের। এরপর তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছে, ‘নগর ভবনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে অনেক ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায় না। তাদের সেই চক্রান্তের মুখে পড়েছে সড়ক ডিভাইডারের ফুল গাছগুলো। কাজ শেষ হলেও ঠিকাদারের বিল আটকে রাখা, গাছগুলো রোপণের পর যথাযথ পরিচর্যার অভাব, গাছে নিয়মিত পানি না দেওয়া— এসব কারণে অনেক স্থানের গাছে ফুল ফোটেনি।’

তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ নগর ভবনের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়েই সড়ক ডিভাইডারে গাছ রোপণ করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু ঢাকার পরিবেশগত কারণে অনেক এলাকায় ফুল ফোটেনি। কিছু কিছু স্থানে গাছই মরে গেছে। যানবাহনের অতিরিক্ত কালোধোঁয়া আর ধুলাবালিসহ বৈরী পরিবেশের কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

অবশ্য প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি বলে মন্তব্য নগর ভবন কর্মকর্তাদেরা। এ কারণে তারা মনে করেন, গাছে সময়মতো ফুল ফুটছে না। তাদের বক্তব্য— ‘এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দেওয়া হয়েছে। তারা নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাছের যত্ন ও পরিচর্যা চলছে। এখন অনেক স্থানে ফুল ফুটেছে।’

বিশেষজ্ঞ মতামতের পরও প্রকল্পের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেমন ফুল ফুটলেও কেন আবার আগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ডিএসসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার অভিযোগ স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সত্যি বলতে এই প্রকল্পে আমরা বেশ ব্যর্থতা দেখছি। সেজন্যই আগের মতো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এটি।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মাঝে মধ্যে এমন কিছু কাজ করে, যা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জন্ম নেয়। ঢাকার পরিবেশ এখনও এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি যে তাতে ফুল ফুটবে না। এর নেপথ্যে সংশ্লিষ্টদের অবহেলাসহ অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে।’

অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক ডিএসসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আমাদের চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। গাছে ফুল না ফোটায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাকে চাপ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের মাধ্যমে কারণ দর্শাতেও বলেছি। আশা করছি, সব জটিলতা দূর হয়ে ঠিকই ফুল ফুটবে।’

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ