প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে আসন্ন বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বড় আকারে আলোচিত হবে। বৃহৎ অর্থনীতির ৭ দেশের জোট জি ৭-এর আউটরিচ প্রোগ্রামে অংশ নিতে আগামী ৭ জুন চারদিনের সফরে কানাডা যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
৯ জুন ওই জোটের দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বর্তমান সময়ের অন্যতম বৃহৎ মানবিক বিপর্যয় রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে জানাবেন এবং সহায়তা কামনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন বাংলাদেশ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হবে এবং সেখানেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে।
এ বছরের জন্য জি-৭ এর প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব পালন করছে কানাডা। জোটভুক্ত দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্স।
এ আগে ২০১৬ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত জি ৭-এর আউটরিচে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোটের বাইরে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর নেতাদের মূল সম্মেলনের বাইরে আয়োজিত আউটরিচ প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সব রকম সহায়তা দিয়ে আসছে। কানাডা রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে খুবই সোচ্চার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার বিষয়ে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছেন।
সম্পূর্ণ মানবিক কারণে বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এমনভাবে ফেরত পাঠানো, যাতে তারা আর ফেরত না আসে। এজন্য জাতিসংঘসহ অন্য বড় দেশগুলোর সহায়তা একান্তভাবে দরকার।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে মিয়ানমারও একই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
সূত্রমতে, সামনের দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাবিরোধী গণহত্যা সংক্রান্ত মামলা করা যাবে না কিনা এই বিষয়ে একটি শুনানি হবে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাও দেখার বিষয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশসহ একই মনোভাবাপন্ন দেশগুলোর উচিত হবে একই ভাষায় মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়। এজন্য ঢাকা ও অটোয়া বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ।
নূর চৌধুরীর প্রত্যাবাসন
দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় অবস্থান করা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বাংলাদেশ উত্থাপন করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখনই সুযোগ পাই নূর চৌধুরীর প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উত্থাপন করি। এবারও এটি করা হবে।
এ বিষয়ে কানাডার অবস্থান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, কানাডার আইন এক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাদের আইন অনুযায়ী প্রত্যাবাসিত ব্যক্তি যদি দেশে ফেরত যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা থাকে, তবে তারা তাকে ফেরত দিতে পারে না।
বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়াদি
বাংলাদেশ কানাডার বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেয়ে থাকে। যে সুবিধা বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আর থাকবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই এই সুবিধা যতদিন সম্ভব বজায় থাকুক। বিষয়টি আমরা জোরালোভাবে তুলবো। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, সুশাসন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।