পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে গত কয়েকদিন অমানবিক যন্ত্রণা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া নুসরাতের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের ঝড়। একই সঙ্গে এই বিচার যেন দ্রুত নিশ্চিত করা যায় সেটি মনিটরিংয়ের অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হাজারও মানুষ। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দাবি একটাই, নুসরাতকে বাঁচানো যায়নি, বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নারীবাদী লেখক সাদিয়া নাসরিন লিখছেন, ‘ “আমার যা হয় হোক, তার যেনো বিচার হয়”... কথাটার ওজন কি আমরা বুঝি? আমরা কি বুঝতে পারছি যে এই কাজটা আমাদের করতে হবে? করবো আমরা? এতোটুকু এতোটা লড়াই একলা করতে করতে পুড়ে মরেছে মেয়েটি, বাকিটুকু আমরা পারবো না? পারবো না আমরা?’
ভিকারুন্নুনিসা নুন স্কুলের শিক্ষক সৈয়দা তানজিনা ইমাম লিখেছেন, ‘নুসরাতরা চলে যায়। চলে গিয়ে বেঁচে যায়। যারা থেকে যায় তাদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় বন্ধুর হন্তারক আর নিজের ধর্ষককে বাঁচানোর মিছিলে।’
এই বিচারকাজের মনিটরিং এবং ফলোআপ থেকে আমরা যেন বিচ্যুত না হই উল্লেখ করে অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আরা নীপা লিখেছেন, ‘আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত... আমি সারা বাংলাদেশের কাছে বলবো, সারা পৃথিবীর কাছে বলবো এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য, আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো...। নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে করতে...। সমগ্র দেশ জাতি ও জগতের কাছে রাফি দাবি রেখে গেছে...। সমাজের মানুষগুলোর মানুষ হওয়ার, মানুষ করার, মানুষ জন্ম দেওয়ার শেষ সময়টাও চলে যাচ্ছে– তাও ঘুমাচ্ছে প্রাণীগুলো...!
‘নুসরাত জাহান রাফির যৌন নির্যাতক মাওলানা সিরাজ এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি পিশাচের ফাঁসির দাবি জানাই...।’
বিচারের দাবি নিয়ে নাট্যকার মাসুম রেজা লিখেছেন, ‘নুসরাতকে বাঁচানোর জন্যে সব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন আপনারা...। তাকে বাঁচানো যায়নি...। এবার শুধু এই ব্যবস্থাটুকু করুন যাতে ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে লোলুপ সিরাজুদ্দৌলাদের বিচার হয়...। নুসরাত জানতো, তার এই পরিণতি হতে পারে তারপরেও সে সিরাজুদ্দৌলাকে কঠিন শাস্তি দিতে চেয়েছিলো...। নুসরাত আত্মহত্যার পথ পরিহার করে আত্মদান করে গেলো... এ যেনো ভুলে না যাই...।’
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ লিখেছেন, ‘আই ডিমান্ড জাস্টিস ফর নুসরাত।’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ রহমান লিখেছেন, ‘৮০% পুড়ে যাওয়ার পরেও যেই মেয়ে বলে যে, সে চিৎকার করে সবাইকে বলবে, একটা “অন্যায়” হয়েছে, মরে গেলেও সেই মেয়ে একটা সাহসী মেয়ে, বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীন লাখ লাখ নারীর জন্য নুসরাত সাহস।
‘মেয়ে তুমি মরে যাও, তবু চিৎকার করে মরো। তুমি চিৎকার করেছ দেখেই সোনাগাজির দুইশ’ কিলোমিটার দূরে আমরা চিৎকার করেছি।
‘নুসরাত দেখিয়ে দিলো অবস্থা হয়তো আরও দুইশ’ বছরেও পরিবর্তন হবে না, কিন্তু চিৎকার করাটা জরুরি।
‘আমি আমৃত্যু একটা হত্যার বিচারের কথা সবাইকে মনে করিয়ে দেবো বলে পণ করেছিলাম। সেই লিস্টটা দুজনের হলো। ২৬/২/২০১৫ ও ১১/৪/২০১৯।’
প্রসঙ্গত, ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় নুসরাত বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান।
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্রী সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা একেএম মানিকের মেয়ে। অভিযোগ আছে, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করে। এ কারণে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মেয়েটির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন।
আরও খবর:
নুসরাতকে বাঁচাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি: মেডিক্যাল বোর্ড প্রধান
নুসরাতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ফিডব্যাক এলে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের
লাইফ সাপোর্টে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী
ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী শঙ্কামুক্ত নয়
ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসায় ৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড
মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: ‘অগ্নিসংযোগকারীদের পরনে ছিল বোরকা, হাতমোজা ও কালো চশমা’
পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ