X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অকাল বন্যা, মধ্যাঞ্চলে প্লাবিত এলাকা বাড়ছে

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
০১ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৫০আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:১০

 

 

রাজশাহীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসার পানির কারণে পদ্মাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিছু স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। 

গঙ্গায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিহার, পাটনা ও মালদায় বন্যার কারণে এসব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে রাখা হয়। ফলে এটা নতুন কোনও বিষয় নয়। গেট খোলা রাখার কারণে বন্যার শঙ্কা নেই বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

রাজশাহীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
তবে এরইমধ্যে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর,  পাবনা, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা-পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী  মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, ‘এটি স্বাভাবিক বন্যা পরিস্থিতি। কয়েকদিন আগে বিহারের দিকে উজানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির প্রভাবেই এখন এই বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি খুব সাময়িক। বেশি দিন থাকবে না। এক সপ্তাহের মতো স্থায়ী হবে। তারপর এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

রাজশাহীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রাজশাহী

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে পদ্মা ও মহানন্দায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে রাজশাহী জেলার চরাঞ্চলের মানুষ গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে উঁচু নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। অপরদিকে পদ্মার পানি রাজশাহীতে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও ভয়ের কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্যোগ মোকাবিলায় চারটি উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের বেশ কিছু মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া শহরের তালাইমারি এলাকার পদ্মাপারের শহররক্ষা বাঁধের ভেতরের অংশে কিছু মানুষ পানিবন্দি আছেন।

রাজশাহীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজমিটার রিডার এনামুল হক জানান, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৮.৪ মিটার। সন্ধ্যা ৬টায় ১৮.১০ মিটার।  তিনি বলেন, ‘পদ্মায় পানি বাড়লেও রাজশাহীবাসীর আপাতত ভয় নেই। পানি এখনও বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমা ১৮.৫০ মিটার। তবে আমাদের শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯.৬৮ মিটার।’

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকায় ৫০৬ জনকে সহায়তা করা হয়েছে। পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। সেই সঙ্গে আজ রোদ ওঠায় এখনও বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। তবে দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনিতে বানভাসি অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে।’ 

পবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবু বাশির জানান, বন্যায় উপজেলার হরিপুর ও হরিয়ান ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড়, চরনবীনগর, চরতারানগর, মধ্যচরের ৫৯৭টি পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩৯১টি পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দকৃত প্রায় ১১ টন চাল দু-একদিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

রাজশাহীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সোমবার হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোদাগাড়ী উপজেলা চরআষারিয়াদহ ইউনিয়নের চর নওশেরা, হুমন্তনগর, নতুনপাড়া, আমতলা খাসমহল, বারিনগর, চরবয়ারমারী, চরবাসুদেবপুর ইউনিয়নের হাতনাবাদ, গোগ্রাম ইউনিয়নের নিমতলা, আলীপুর, দেওপাড়া ইউনিয়নের খরচাকা, মোল্লাপাড়া গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বাড়িতে বন্যার পানি ওঠে পড়ায় স্থানীয়রা উঁচু জায়গায়, স্কুল ও রাস্তার পাশে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরের প্রায় এক হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দি। এছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ড অন্য ওয়ার্ডের চেয়ে নিচু। ফলে পানি উঠেছে। চরের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। কিছু কিছু বাড়ি ডুবেও গেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোর ৬টা পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঙ্খা পয়েন্টে পানির স্তর ২২.০৯ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার  ০.৪১ সেন্টিমিটার নিচে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান,  ফারাক্কার সব লক গেট খুলে দেওয়ার পর গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির হার বেশি থাকলেও গত ১২ ঘণ্টায় তা কমেছে। 

এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে সদর উপজেলার আলাতুলি, নারায়ণপুর, চরঅনুপনগর, শাহজাহানপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।      

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত    

চরবাগডাঙ্গা ইউপি’র ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামরুজ্জামান টুটুল জানান, গোঠাপাড়া, বাগানপাড়া, চাকপাড়া, গিধনিপাড়া, মালবাগডাঙ্গা গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরবাগডাঙ্গা বিওপি এলাকার গিধনিপাড়ায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, হাকিমপুর, সেকালিপুর রাবনপাড়া, দুর্লভপুর ও নরেন্দ্রপুরের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এতে ওইসব এলাকার কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে।

চরঅনুপনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, নতুনপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, লম্বাপাড়া, মোন্নাপাড়া, চরঅনুপনগর, বাগানপাড়া, কলাবাগান ও চরকাশেমপুর ক্যানেলপাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ফারাক্কার  গেট খুলে দেওয়ায় জেলার পদ্মা ও মহানন্দা নদীর অববাহিকায় থাকা নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে জেলার  প্রায় ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির মাসকলাই তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৬০০ হেক্টর জমির শাকসবজি ও ৯৫ হেক্টর জমির হলুদ নষ্ট হয়ে গেছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, ‘আগামী ৪-৫ অক্টোবর পর্যন্ত পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বর্তমানে পানি বাড়ার যে হার তাতে আশা করছি বিপদসীমা অতিক্রম নাও করতে পারে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নদীভাঙন ও বাঁধের কোনও জায়গায় সমস্যা হলে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বড় ধরনের বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জেলা, উপজেলার সব পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে নদীভাঙন তেমন একটা নেই। তবে পানি কমতে শুরু করলে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।’

ভারত থেকে আসা ঢলে তলিয়ে গেছে মধ্যাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো

পাবনা

উজান থেকে ধেয়ে আসার কারণে পাবনায় পদ্মার পানি যেকোনও সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। আর প্রবল স্রোতে ও অতিরিক্ত পানির ফলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ’ হেক্টর ফসলি ও নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ বলেন, ‘পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীস্থ পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে (৩০ সেপ্টেম্বর) সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। নদীতে যে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা বর্তমানে পরিমাপের পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে। প্রতিদিনই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫/৬ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

স্থানীয় সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন,এবারে যেভাবে পদ্মায় পানি বাড়ছে, গত কয়েক বছরে সে পরিমাণ পানি ছিল না। কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত নদীরক্ষা বাঁধের তিন থেকে চার ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশে ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই পাকশীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলি জমি। তবে এখন পর্যন্ত কোনও বসতভিটার ক্ষতি হয়নি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীকুণ্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। তবে পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘যে গতিতে পানি বাড়ছে, তাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।’

 

নাটোরের নদীগুলোতে বেড়েছে পানি

নাটোর

ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় উজান থেকে আসা ঢল এবং বৃষ্টির কারণে পদ্মায় পানি বাড়ছে। ফলে নাটোরের লালপুর চর এলাকায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগারমিল এলাকায় পানিতে ডুবে গেছে অনেক আখের জমি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে চিনির উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছে নর্থবেঙ্গল সুগারমিল কর্তৃপক্ষ।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, রাজশাহী পয়েন্টে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পদ্মায় পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাজশাহী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে চারঘাট পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মার পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। দুই দিনের মধ্যে পদ্মার পানি রাজশাহী ও চারঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানিন দ্যুতি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া, লালপুর ও ঈশ্বরদী ইউনিয়নে পানি বাড়তে শুরু করে। ওই এলাকার অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছেন। অপরদিকে নতুন করে দুরদুরিয়া ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে।

নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগারমিলের এজিএম (কৃষি) মাজহারুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকালে তিনি পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হবে দাবি করে তিনি জানান, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ একর আখের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অবস্থার উন্নতি না হলে নতুন নতুন এলাকার আখের জমি প্লাবিত হবে। এ কারণে আগামী মৌসুমে চিনির উৎপাদন কমে যেতে পারে।’

 

টাঙ্গাইল

টানা বর্ষণে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে একদিনে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, ভূয়াপুর, নাগরপুর ও কালিহাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ নতুন করে বন্যা আতঙ্কে রয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে একদিনে যমুনায় ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার পানির লেভেল ছিল ১২ দশমিক ০৯ মিটার। বুধবার পানির লেভেল রয়েছে ১৩ দশমিক ০১ মিটার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা নদীতেও এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

রাজবাড়ী

এক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে পদ্মায় পানি। বর্তমানে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে পানি ঢুকে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলে। জেলার সদর, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার নদী তীরের অনেক বসতঘর ও ফসলি জমি এখন পানিতে প্লাবিত।

কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানান, পদ্মার পানি বেড়ে কালুখালী উপজেলায় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাধবপুর, হরিণবাড়ীয়া, লস্করদিয়া, কৃষ্ণনগর, ভবানীপুর, হরিণাডাঙ্গা, চররাজপুর, বিজয়নগর, নারানপুর, আলোকদিয়া, বল্লভপুর, ভাগলপুর, বাগঝাপা, গংগানন্দপুর, কামিয়া, কালুখালী, পাড়াবেলগাছী ও গতমপুর গ্রামে অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

কালুখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রশিদ জানান, ‘বন্যার কারণে কৃষ্ণনগর চরের আব্দুল কুদ্দুস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের হরিণবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হরিণাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম নুরুন নবী জানান, ‘রাজবাড়ী জেলার পাংশা ও কালুখালী উপজেলার হাবাসপুর ও শাহমীরপুর গ্রাম ও কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া এলাকায় পদ্মার ডান তীর ভাঙনকবলিত এবং অতিঝুঁকিপূর্ণ। এখানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়ায় অনেক গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।’

কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছিনা পারভীন জানান, ‘যেসব অঞ্চলে মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে তাদের সাহায্যের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনায় পানি বেড়েই চলেছে। জেলার শিবালয়ে যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায়। পানি বাড়তে থাকলে চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।

তিনি জানান, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি শিবালয় উপজেলার তেওতা এলাকায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে ৯.৩০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে,  যা বিপদসীমার কিছুটা নিচে। এ নদীতে বিপদসীমার লেভেল হচ্ছে ৯.৪০ সেন্টিমিটার।

এদিকে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক  হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, ‘জেলার যমুনা ও পদ্মার চরাঞ্চলে এখনও শস্যের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে পানি বাড়তে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ। 

স্থানীয় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের আলীনগর, বাহিচর, ফিলিপনগরে  এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ফিলিপনগর ইউনিয়ন তলিয়ে যাবে।’

স্থানীয় মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলমগীর বলেন, ভুরকা এলাকায় স্লুইসগেট দিয়ে পদ্মার পানি ঢুকে বৈরাগীরচর, হাটখোলা, রহিমতলা, মাছদিয়াড়, বালিরদিয়াড়, কোল দিয়াড়ের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে কৃষকের তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ও ঘরবাড়ি। এসব গ্রামের রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এভাবে দুই দিন পানি বাড়লে পুরো ইউনিয়ন পানিতে ডুবে যাবে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ বলেন, এ ইউনিয়নবাসী এখন পানিবন্দি। অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর পানিতে থৈ-থৈ করছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘরের মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সিরাজ মণ্ডল জানান, গতকাল  থেকে আবারও চরম হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব এলাকায় পানি প্রবেশ করেনি সেসব এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। বলতে গেলে এখন পুরো রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ডুবে গেছে প্রায় ছয় কোটি টাকার ফসল। এ পর্যন্ত উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়ন ইউনিয়নে ৪৭টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় চরাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রতিটি পরিবারের জন্য ১০ কেজি চাল, তেল, চিড়াসহ বিভিন্ন সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ছিল ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটারের ওপরে। গড়াই নদী পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। বর্তমানে সেখানে পানির অবস্থান রয়েছে ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটারে। ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছিল।

তিনি আরও জানান, ভারতে বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও দুই তিনদিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর কমে আসবে। শহররক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ ও পয়েন্টে পাউবো কর্মকর্তারা নজর রাখছেন।

 

 

 

/এফএস/টিএন/ এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!