X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কী উপায়ে ইতিহাস জানবে পরবর্তী প্রজন্ম

উদিসা ইসলাম
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫২আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৪

 

মুক্তিযুদ্ধ দেশের সেরা সন্তানদের কথা পরবর্তী প্রজন্ম যেন একই রকম আবেগ ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করে সেই ভার প্রথমত রাষ্ট্রকে নিতে হবে উল্লেখ করে লেখক, গবেষক ও রাজনীতিবিদরা বলছেন, এখন সময় ইতিহাসকে এগিয়ে নেওয়ার। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ যতক্ষণ পর্যন্ত মূলধারার সাহিত্য ও গবেষণায় না আসবে, সামাজিকভাবে প্রান্তিক মানুষের কথা যতদিন না আসবে ততদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সেটি কার্যকর হবে না। তাদের ভাষ্য- এই প্রজন্ম ইন্টারনেটের মধ্যেই জীবনযাপন করে। বই থেকে মুখ সরিয়ে নেওয়া এই প্রজন্মকে ইন্টারনেটে ভালো ও সঠিক ইতিহাসের বই দিতে হবে। অডিও ভিজ্যুয়ালই তাকে বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করবে।



বর্তমান প্রজন্মকে ঘিরে শঙ্কা ও আগামীতে দেশপ্রেমের জায়গা আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকারের এই সময়ে আজ বুদ্ধিজীবী দিবস। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে তার নজির ইতিহাসে নেই বললেই চলে। আর সেই গণহত্যা ও নৃশংসতার ভয়াবহতা আরও বেড়ে যায় যখন বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয় তালিকা করে। রাতের অন্ধকারে লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও প্রকৌশলীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।
আমরা কি পেরেছি আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে, তার আসল স্বরূপকে তুলে ধরতে? এ প্রশ্নে শহীদ জায়া শ্যমলী নাসরিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে এবং ২১ বছর ক্ষমতায় থাকে তাদের কারণে বড় এক প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস জায়গা পায়নি। সেই সময়ে যারা বড় হয়েছে সেই প্রজন্ম এখন অভিভাবক। তারা নিজেরাই ইতিহাস জানতে পারেননি ঠিকভাবে। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
সঠিক ইতিহাস জানার আগ্রহ কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সঠিক ইতিহাসের বইয়ের বিকল্প নেই। কথ্য ইতিহাস তো অবশ্যই এক রকমের প্রভাব ফেলে কিন্তু ভালো বই থাকতে হবে। এখনকার প্রজন্ম ডিজিটাল, তারা ই-বুক পড়তে আগ্রহী। ভালো বইগুলো ইন্টারনেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পুরো কাজটি সরকার শুরু করেছে। এই দেশ যে ভিতের ওপর গড়ে উঠেছে সেই মুক্তিযুদ্ধকে যেন পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে উপস্থিত করা অব্যাহত থাকে সেই চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে। শহীদদের, তাদের জীবনাদর্শ সবকিছুকে মহিমান্বিত করে হাজির করতে হবে। তারা সত্যটা জানতে থাকলে দেশপ্রেম এমনিতেই জাগ্রত থাকবে।’
নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘নিজেদের একটা কাজ তার আগে বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের যে রিপ্রেজেন্টেশন সেটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে স্পিরিট সেটার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। আবেগটা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে বিভিন্ন নামে যে অ্যাকটিভিটিস হয়, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রিপ্রেজেন্টেশনের আবেদন কমতে থাকে।’
তিনি মনে করেন, এই কারণে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে সুবিধাবাদের হাতিয়ার মনে করে। তবে এদের ওপর অনেক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল ক্যাম্পেইনের প্রভাবও থাকে। সেটা খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারতো না যদি মুক্তিযুদ্ধের রিপ্রেজেন্টেশনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে সত্য রাজনীতি ও সৎ নেতা পেতো নতুন প্রজন্ম। সেই জায়গাটা তৈরি করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে মহিমান্বিত করার যে ইতিবাচক নির্মাণ সেটি যে সত্যভাবে করতে পারবে তাকে এগিয়ে আসতে হবে। সেটা না করা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগের প্রজন্ম আবেগ দেখালেও এ প্রজন্মের কাছে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
গত ৫০ বছরে যে বয়ান উপস্থিত তাতে স্বল্পসংখ্যক মানুষের রাজনৈতিক ভূমিকা উল্লেখ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ পশ্চিমা যুদ্ধ ধারণা থেকে ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের মতো গণযুদ্ধে সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে যার যার ভূমিকা পালন করেছে। ধরা যাক নারীর ভূমিকা যদি সামনে আনি তাহলে সেইসব মানুষ নিজেকে ইতিহাস চর্চার একটি অংশ ভাববে। এখন যেভাবে চর্চা করা হয় সেটির কারণে সীমিত কিছু মানুষের ইতিহাস চর্চিত হচ্ছে।’ এ প্রজন্মের মধ্যে জানার আগ্রহের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বইয়ের দুনিয়া শেষ হয়ে গেছে। এখনকার কারও কাছে পৌঁছাতে চাইলে আমাদের তারা কীভাবে চায় সেটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।’
গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধকে মাল্টিমিডিয়ায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি বিশাল বিষয়। এখানে বেঁচে থাকাও একটা ইতিহাস। গবেষকরাও যা সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। যুদ্ধের সময় নারী কীভাবে বেঁচে থেকেছে, সংসার চালিয়ে যোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে। এসব অনেক কিছু জানা যায় না ইতিহাসে।’
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান তৌহিদ রেজা নুর পরের প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছেন। প্রস্তাবগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নরুপ-
বই পড়া ও ভিডিও থেকে জানা কর্মসূচি এবং বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য মনীষীদের লেখা ও কাজ নিয়ে ব্যাপক আয়োজন রাখা দরকার যেখানে তরুণরা হবে মূল অডিয়েন্স।
তিনি বলেন, এসব কর্মসূচি সারা বছরজুড়ে করতে হবে। লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে স্পটে ইতিহাস বর্ণনার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম) তরুণদের জন্য এ বিষয়ে ই-তথ্য সরবরাহ করতে হবে। তিনি জানান, এর বাইরে তরুণদের বাবা-মাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কিছু উদ্যোগ থাকতে হবে যেন তারা এ ধরনের নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে সন্তানদের উৎসাহিত করেন।

/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ