X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু স্লোগানে সোনার বাংলা আসবে না: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
০৪ জুলাই ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২০, ০৮:১৬

জনতার মাঝে বঙ্গবন্ধু, ৫ জুলাই ১৯৭২ ডেইলি অবজারভারে প্রকাশিত ছবি

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ  পড়ুন ওই বছরের ৩ জুলাইয়ের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, শুধুমাত্র স্লোগান দিয়ে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো না। বরং সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ কৃষক-শ্রমিকসহ সব পেশাজীবীকে নিজ নিজ জায়গায় কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে পল্লি উন্নয়ন ও কৃষি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।’ ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই কুমিল্লার অভয় আশ্রম ময়দানে এক  জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চোরাচালানকারীদের পাকড়াও করে পুলিশের হাতে হস্তান্তরের নির্দেশও দেন বঙ্গবন্ধু।

কৃষকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বর্তমানে শতকরা ৮০ জন কৃষককে রাজস্ব দিতে হচ্ছে না। কারণ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির কর মওকুফ করা হয়েছে।’ কৃষকদের ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কম করে হলেও এক মণ করে ধান ও পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

সরকারি কর্মচারীদের প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ইয়াহিয়া খানের দখলদারিত্বের আমলে যেসব সরকারি কর্মচারী চাকরি করেছে, সরকার চাইলে তাদের বরখাস্ত করতে পারতো।’ কিন্তু তাদের ব্যাপারে উদার মনোভাব গ্রহণ করে তাদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এখন তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে ও সততার সঙ্গে জনগণের সেবা করতে বলেন তিনি।

ইত্তেফাকের প্রথম পাতা, ৫ জলাই ১৯৭২ মজুতদার ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে কারোর প্রতি কোনও অনুকম্পা দেখানো হবে না।’ ভাষণে তিনি আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের হত্যার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিলে তিনি (ইন্দিরা) এক কোটি লোককে আশ্রয় দেন। তিনি আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেন।’ আশ্রয় দেওয়ায় কুমিল্লা জেলার সংলগ্ন ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ ও এলাকার লোকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানান। ওই জনসভায় দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তা পরিচালনা করেন। পরে এবারের সংগ্রাম দেশ গড়ার সংগ্রাম স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু ভাষণ শেষ করেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের মাটিতেই হবে বলে জানিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের মাটিতেই তাদের বিচার করবো। অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সংযত হওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে আমি কর্ণপাত করছি না। পাকিস্তানের স্বীকৃতির ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভর করে না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই বাস্তব সত্যকে ইতোমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে। বাংলাদেশ একটা বাস্তব সত্য এবং টিকে থাকার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানকে আমরা স্বীকার করি কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন।’

দৈনিক বাংলা, ৫ জুলাই ১৯৭২ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ট্রাস্ট

প্রধানমন্ত্রী সভায় ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা আহত বা অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তাদের কল্যাণ সাধনের জন্য শিগগিরই একটি ট্রাস্ট গঠন করা হবে। হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে ট্রাস্টের প্রধান করা হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের পরিবারবর্গকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে এ যাবত এককোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

নতি স্বীকার করবো না

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন বা না দেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কী করে নিজের আসন করে নিতে হয়, সাড়ে সাত কোটি লোকের দেশ— বাংলাদেশ ভালো করেই তা জানে।’ হুমকি বা চাপের মুখে নতি স্বীকার করবো না উল্লেখ করে জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনাব ভুট্টোর চিন্তা করা উচিত, পাকিস্তানের প্রতি আমাদের স্বীকৃতিরও তার প্রয়োজন আছে।’

তিনি ভুট্টোকে মনের অস্থির অবস্থা পরিহার করে উপমহাদেশের বাস্তব অবস্থা স্বীকার করে নিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন, ‘বিশ্বের এমন কোনও শক্তি নেই— যা আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা থেকে বিরত করতে পারে। এ প্রশ্নে আমরা কোনও হুমকি বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করবো না।’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!