X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বন্যার পানি কমছে, দেখা দিচ্ছে নতুন দুর্ভোগ

শফিকুল ইসলাম
০৭ আগস্ট ২০২০, ১৪:০০আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২০, ১৪:২৮

বন্যাকবলিত এলাকা
বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বাড়িঘরে ফিরে আসছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। ঘরে এখন বেড়া, মাথার ওপর চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব ভেসে গেছে। এছাড়া আয়-রোজগার বন্ধ। সব মিলিয়ে বন্যার্তরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। 
দুর্গতরা জানিয়েছেন–এবারের বন্যায় আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। অনেকের বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়ে কম দামে বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ।

পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি ওঠে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই।
বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে একরকম অন্ধকারে আছেন বানভাসিরা।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার তাজু মুনশি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি কমতে শুরু করায় ঘরে ফিরেছি। কিন্তু বাড়িতে বসবাসের কোনও উপায় নাই। দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে ঘরের ভিটা কাদা হয়ে গেছে। কয়েকদিনের কড়া রোদেও এই কাদা শুকাবে বলে মনে হয় না। ঘরের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে গেছে। বেড়া পানিতে বিলীন। সব নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু হাতে তো কোনও টাকা-পয়সা নাই।’

তাজু মুনশির মুখে আরও শোনা গেলো, ‘মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে। মাছের চাষ করেছিলাম, তাও ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি আগেই বেচে দিয়েছি। আয়ের কোনও পথই খোলা নাই। ঘর-দুয়ার ঠিক করবো কী দিয়ে তা ভেবে পাই না। বন্যার পানি কমলেও রোগবালাই দেখা দেওয়ায় বিপদে আছি। ওষুধপত্র নিতে পারছি না টাকার অভাবে।’       

একই রকম হতাশা কুড়িগ্রামের উলিপুরের শিক্ষক মোতালেব হোসেনের কথায়, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে যাইনি। মাচা করে ছিলাম কয়েকদিন। পরবর্তী সময়ে মাচা কোনও কাজে আসেনি। ঘরের চাল বরাবর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উপজেলা সদরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে এতদিন ছিলাম। ৫ আগস্ট সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করায় পরদিন বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু ঘরে থাকার তো কোনও উপায় নাই। বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নাই। তাছাড়া রোগ-ব্যাধি তো আছেই।’

রোগ-ব্যাধি দেখা দেওয়ার বিষয়টি নজরে আছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস। তার দাবি, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে সামান্য রিপোর্ট পাচ্ছি। তবে রোগবালাই এখনও প্রকট আকার ধারণ করেনি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পর্যাপ্ত পরিমাণে ওরস্যালাইন সরবরাহ করেছি। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগের ওষুধ রয়েছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান আশ্বাস দিয়েছেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করা এলাকায় সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু হবে। এজন্য বরাদ্দ রয়েছে। যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। ফসল তলিয়ে যাওয়া কৃষকরা আবারও বীজ ও সার পাবেন। এছাড়া চাষের জন্য দেওয়া হবে মাছের পোনা। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রেখে আবাদের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ডা. এনামুর রহমান। তার আশা, ‘বন্যার পর ফসল ভালো হয়। পলি পড়ে জমির উর্বরতা বাড়ে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে। এটি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মা নদীর পানিও কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত অপর এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কমতে শুরু করবে। আগামী সাতদিনে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে আগামী সাতদিন পানি ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। ফলে আগামী সাতদিনে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকার চারপাশের নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আরও কিছুদিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। তারপর কমে বিপৎসীমার নিচে চলে আসতে পারে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী চারদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি স্টেশনের মধ্যে বাড়ছে ৩৫টিতে, কমছে ৬২টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টিতে।

বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ এলাকায় লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

/এমআর/জেএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম রবিবারের ভাষণে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেন পোপ লিও
প্রথম রবিবারের ভাষণে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেন পোপ লিও
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব বিটুসহ কারাগারে ৩
শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব বিটুসহ কারাগারে ৩
অতিরিক্ত ঘাম কমাতে এই ১১ টিপস মেনে চলুন
অতিরিক্ত ঘাম কমাতে এই ১১ টিপস মেনে চলুন
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো