X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ড নয়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণজাগরণ চান শাহবাগের আন্দোলনকারীরা

সিরাজুল ইসলাম রুবেল
১২ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৪৭আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২০, ১৯:১৯

শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ-কর্মসূচি চলমান রাখার কথা জানিয়েছে আন্দোলনে থাকা বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন। আইন নয়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চান বলে জানান আন্দোলনকারীরা। গত ৫ অক্টোবর থেকে টানা অষ্টম দিনের মতো শাহবাগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে আসছে এসব সংগঠন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি কখনও আমাদের ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য শুরু থেকেই ছিল আন্দোলনের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টি করা। দেশে অনেক আইন হয়েছে। আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। সেটির বাস্তবায়ন হলেই কেবল আন্দোলন স্থগিত করবো। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।'

ধর্ষণের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেও বন্ধ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বামপন্থী সংগঠনের কেউ কেউ। তারা বলছেন, এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেও কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না, যদি এর বাস্তবায়ন না হয়। কারণ, এর আগেও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি। কাজেই শুধু আইন করে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, ‘এসব আইন দেশে অনেক আছে। কিন্তু কোনও কাজে লাগেনি। আর এখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি জোরালো আন্দোলন চলছে। সেটিকে দমন করার জন্যই এসব আইনের অনুমোদন হচ্ছে। ধর্ষণ সংস্কৃতি গণজাগরণ ছাড়া রোধ করা সম্ভব না।’ শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করা। মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কখনও ধর্ষণের মতো অপরাধ সমাজ থেকে নির্মূল করা যাবে না। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এটি রোধ করা সম্ভব। আমরা ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছি।'

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আন্দোলন দমন করার জন্য এক ধরনের ‘আইওয়াশ’ ও মূল সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা। বাস্তবে দেখা যায় আইন কঠোর হলেও তার প্রয়োগ শিথিলই থাকে। আমাদের দেশের মূল সমস্যা বিচারহীনতা। ধর্ষণের প্রচলিত শাস্তি যাবজ্জীবনই যেন সঠিকভাবে কার্যকর করা যায় তা নিশ্চিত করা দরকার।'

তিনি আরও বলেন, ‘ফাঁসি হলে ধর্ষণের শিকার একজন খুব সহজেই আইনের আশ্রয় নিতে চাইবে না। কারণ, ধর্ষণের মতো ঘটনার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের লোকজন, আত্মীয় -স্বজন, গ্রামের কেউ বা পরিচিত কেউ জড়িত থাকেন। আবার ধর্ষক তার ফাঁসি নিশ্চিত জানলে সেক্ষেত্রে সে ভিকটিমকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে। এতে ভিকটিমের জীবননাশের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে।'

আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবি হলো:

১. সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ নির্যাতন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

২. পাহাড়-সমতলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।

৩. হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে।

৪. সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে।

৫. ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশ নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

৬. তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে।

৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করতে হবে। মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হব।

৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনও প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ পরিহার করতে হবে।

৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।

 

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!