X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

সোয়া ৩ কোটি দরিদ্রের ঘর বানিয়ে দেবে কে?

শফিকুল ইসলাম
১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:২৭আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৩৩

আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে খুশি গাজীপুরের এই নারী
দেশে এই মুহূর্তে দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে সোয়া তিন কোটি মানুষ। এদের বেশিরভাগেরই নিজের বাসাবাড়ি নেই। গ্রামের দরিদ্র যারা, তাদের ঘরবাড়িও এমন যে সামান্য ঝড়েই ভেঙে যায়। একবার ভাঙলে টাকার অভাবে মেরামতও করা যায় না। উপরি হিসেবে আছে নদী ভাঙন ও অগ্নিকাণ্ড। বাঁচার তাগিদে এ মানুষগুলোই পরে বিভিন্ন এজমালি সম্পত্তি, বন্ধকী সম্পত্তি, ভেড়িবাঁধ কিংবা শহরের বস্তিতে ভাড়া করা ঘরে থাকে। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবনধারার ওপর দেশের উন্নয়নের সূচক নির্ভর করলেও এদের গৃহায়ন নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কথা বলার কেউ নেই। 

২০২০ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব গৃহহীন মানুষকে ঘর বানিয়ে দেবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে আগামী ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে সরকার মুজিববর্ষ ঘোষণা করে। এই সময়ের মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় সরকার। জনমনে প্রশ্ন সরকারের এই দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের তথ্যমতে দেশের দারিদ্র্যের হার এখনও সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুন শেষে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দিনে ১ ডলার ৯০ সেন্ট আয় করতে না পারলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র ধরা হয়। 

সরকারি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১০ সালে দেশে হতদরিদ্র ব্যক্তি ছিল ২ কোটি ৫৮ লাখ। ২০১৯ সালের জুন শেষে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখের কিছুটা ওপরে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মসূচির আওতায় ঘরহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কার্যক্রম চললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহায়নের প্রতিশ্রুতিটি পৃথক কর্মসূচি। ওই কর্মসূচি অংশ হিসেবে দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন পরিবারকে আধপাকা টিন-শেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে নেওয়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনও পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৭ মার্চের মধ্যেই এসব গৃহহীনদের নিজের ঘরে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নেই সংশ্লিষ্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সারা বছরই কিছু প্রকল্প গ্রহণ করে যা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নয়। এক সময় জাতীয় গ্রহায়ণ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্লট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ইদানীং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল ভবনে ফ্লাট ও রাজধানীর বাইরে কয়েকটি জেলায় মধ্যবিত্তদের জন্য প্লট তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাও খুবই সামান্য পরিমাণে। এ সব প্রকল্পে প্লট পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদেরকে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

দেশের এতগুলো গৃহহীনের জন্য কোনও প্রকল্প গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে জানতে জাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার জানিয়েছেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে প্লট ও ফ্লাট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন মানুষদের ঘর ফিরিয়ে দেওয়া বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। 

জানা গেছে, দেশে গৃহায়ন সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গৃহহীন পরিবারের সংখ্যাধিক্য, মালিকানাধীন ও জবরদখলকৃত অননুমোদিত বস্তির সংখ্যা বাড়ছে। জমি ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর দামসহ বাড়ি ভাড়াও বাড়ছে। “জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা ২০১৬” তে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় গৃহায়ন নীতি ১৯৯৩ প্রণয়নকালে সরকারি হিসাব মতে দেশে গৃহায়ন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ইউনিট। ২০০০ সালে ঘাটতি ছিল ৫০ লাখ ইউনিট। নির্মাণ সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা সাপেক্ষে ২০১০ সাল নাগাদ প্রায় ৬২ লক্ষ পাকা ঘর নির্মাণ অপরিহার্য বিবেচিত হয়। এ ছাড়াও সমসাময়িক গবেষণা ও প্রকাশনায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নগর এলাকায় ২০১৫ সাল নাগাদ ১ কোটি ইউনিট গৃহের প্রয়োজন। অর্থাৎ পরবর্তীতে প্রতি বছরে অন্তত ১০ লাখ ইউনিট করে নতুন ঘর নির্মাণের দরকার হবে বলে মনে করে সরকার।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের শতকরা ৭২ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকে। তাদের মোট গৃহের শতকরা ৮১ ভাগ গ্রামে। গ্রামীণ জনগণ সাধারণত নিজেদের উদ্যোগেই ঘরবাড়ি নির্মাণ করে আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপদ্রুত এলাকায় কিছু ঘরবাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং উপকরণ বিতরণ করার মধ্যেই সরকারি উদ্যোগ আটকে আছে। অন্যদিকে শহরে দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা। গুটি কয়েক মহানগরীতেই বাড়তি জনসংখ্যার সিংহভাগ চাপ জমা হচ্ছে। অথচ সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পর্যাপ্ত গৃহ নির্মাণ যেমন সম্ভব হচ্ছে না তেমনি অর্থের অভাবে বিদ্যমান বসতিগুলোর উন্নয়ন এবং নাগরিক অবকাঠামোর সম্প্রসারণও কঠিন হয়ে উঠছে। যার পরিণতি যত্রতত্র বস্তি ও ঘিঞ্জি বসতি। গৃহায়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসনের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াতেই এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে পড়ছে বলে বলা হয়েছে আবাসন নীতিমালায়।

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী