X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির রোডম্যাপ এখনই

উদিসা ইসলাম
২৫ মার্চ ২০১৭, ১৬:৫৯আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৭, ২০:১৪

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে আলোচকরা

জাতীয়ভাবে গণহত্যার স্বীকৃতির পর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ জরুরি বলে মনে করে মুক্তিযুদ্ধ, গবেষক, অ্যাক্টিভিস্ট ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গণহত্যার একটি সার্বিক ম্যাপিং যেমন প্রয়োজন তেমনই এর নানাবিধ দালিলিক প্রমাণগুলো সংকলিত করা থেকে শুরু করে কোথায় কী ধরনের গণহত্যা হয়েছে সেসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ লেখা এবং একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি গবেষকদের এনে একটা মতামত তৈরির কাজ শুরু করাও প্রয়োজন।

আজ শনিবার ‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শিরোনামে আয়োজিত বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে বক্তারা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে আগামীর করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।

সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

আলোচনায় সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তাদেরকে রাজি করাতে হবে তারা যেন তাদের সংসদে আমাদের গণহত্যা নিয়ে আলোচনা তোলেন। এবং এর মাধ্যমে জাতিসংঘে বিষয়টি উত্থাপন করার সুযোগ তৈরি করা। আমরা মনে করি, এখন সবচেয়ে জরুরি কাজটি হলো লবিং। সাবেক এই বিচারপতি স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, এসব বন্ধ হওয়া জরুরি।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু

গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তার আলোচনায় বলেন, গণহত্যা যে ঘটেছে এবং ন্যূনতম ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে এটা শুধু আমরা বলছি তাতো না, সেঞ্চুরি অব জেনোসাইড বইতেও স্পষ্ট লেখা আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাসের ব্রিটিশ পত্রিকা যদি দেখা হয়, সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। এখন আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য করণীয় নির্ধারণের কথা বলতে গেলে কাজটি দুই স্তরের। একটা হলো জাতীয় পর্যায়ের যেখানে দলিল দস্তাবেজ হাজির করে গণহত্যাকে দৃশ্যমান করে তুলতে হবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, এই ত্যাগের বিনিময়ে এদেশ আমি পেয়েছি, এ দেশে আমার। আরেকটি হলো, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যম সবাইকে যার যার জায়গা থেকে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

ফাইজুল হক রাজু

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ফাইজুল হক রাজু। তিনি বলেন, গণহত্যার দালিলিক প্রমাণগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো একত্রিত করে জনমত গঠন জরুরি। আমরা গণহত্যা দিবস চাই এমন না, আমাদের দেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সেই গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হোক সেটি চাই। এই স্বীকৃতি আদায়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, দ্রুত একটি রোডম্যাপ করা জরুরি। এর জন্য জাতীয় কমিটিও হতে পারে। রাজনৈতিক দল হিসেবে যা করণীয় তা আওয়ামী লীগ পালন করছে। এখন ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে তাদের নিজ নিজ জায়গায় কাজ করতে হবে।

মাহজাবিন খালিদ

এসময় আমরা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করার বিষয়। আমরা দ্রুতই সেটি করতে পারবো যদি মনে করি জনমত তৈরি করাটা আমাদের সবার দায়িত্ব। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরের প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে দেওয়া হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা সব সময় হয়েছে। এখন আর সেটি সম্ভব হবে না। এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমরা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করবো।  দূতাবাসগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

নুজহাত চৌধুরী

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ সন্তান নুজহাত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী এখনও মনে করে গণহত্যার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রেহাই পাওয়া যাবে। আমরা শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের বিরুদ্ধে আইন চেয়ে আসছি বহুবছর, কিন্তু ‘জেনোসাইড ডিনায়েল ল’ না হওয়ার কারণে মীমাংসিত সত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সাহস পাচ্ছে এরা। তারা মনে করে না ত্রিশ লাখকে তিন লাখ শহীদ বলাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের এই সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতি অর্জন জরুরি এই কারণে যে, আমাদের ইতিহাস নিয়ে বিকৃত তথ্য দিতে চায় যারা তারা যেন সেই কাজে ভবিষ্যতে সাহস না করে।

বৈঠকিতে বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল

বৈঠকিতে বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল গণমাধ্যমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার মতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া অনেক কঠিন হবে কারণ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক বেশি সংগঠিত এবং শক্তিশালী। যেটি আমরা অনেক সময় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর আচরণেই দেখতে পেয়েছি।’

  বৈঠকির সঞ্চালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার উপস্থাপনায় বৈঠকিতে আগামীর সময়ে বক্তারা যে জাতীয় কমিটির কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে মুক্তিযুদ্ধগবেষক থেকে শুরু করে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে কার্যকর কমিটি হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন তারা। তারা এও বলেন, প্রচারের সময় বারবারই যে বিষয়টা সুস্পষ্ট করা জরুরি তাহলো গণহত্যার স্বীকৃতির ব্যাখ্যা।

/ইউআই/টিএন/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন