X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একদিন বিশ্বসেরা হবে’

জাকিয়া আহমেদ
১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৪২আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:৪৭

মুক্তামনির সফল অস্ত্রোপচার করা মেডিক্যাল টিম ‘আমাদের ছেলে সাকিব আল হাসান বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আমরা বিশ্বসেরা হতে পারি। মন থেকে চাইলে ও চেষ্টা করলে ২০ বছর পর হলেও আমাদের সেই পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব’— বলছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। রবিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের তরুণ চিকিৎসকরা খুব মেধাবী ও আন্তরিক। তারা যদি এখন থেকেই মনে করে আমরা ভালো করবো ও বিশ্বসেরা হবো তাহলে সেটা সম্ভব। তার প্রমাণ জোড়া শিশু তোফা ও তহুরা, বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার ও মুক্তামনি।’

গত ১৪ অক্টোবর রক্তনালীতে টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনির হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির কোলবালিশের মতো ফুলে থাকা হাত এখন অনেক স্বাভাবিক। তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কথা বলতে গিয়ে দেশের চিকিৎসকদের নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. সামন্ত। তিনি বলেন, ‘খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকরা এগিয়েছেন। আমরা আরও এগোবো। কয়েক বছর পর এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা জায়গা করে নেবে বিশ্বে। এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’

সফল অপারেশনের পর হাসপাতালে মুক্তামনি জোড়া শিশু তোফা ও তহুরা, বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার কিংবা মুক্তামনির চিকিৎসা প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক বলেন, ‘১০ বছর আগে এসব চিকিৎসার কথা আমরা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু এখন আমরাই এসব সফল চিকিৎসার অংশীদার। মুক্তামনি যে অবস্থায় এসেছে তাতে আমরা আনন্দিত। সবার কাছে দোয়া চাই, মেয়েটা এরকম থাকলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।’

তবে ডা. সামন্ত জানান, মুক্তামনি এখনও ঝুঁকিমুক্ত না। তাকে নিয়ে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবুও মেয়ের বর্তমান অবস্থা বাবা-মায়ের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। এই সাফল্যই তার ও অন্য চিকিৎসকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে আরও। তার ভাষ্য, ‘দেশের মানুষ বিশ্বাস ও আস্থা রাখলে আমার বিশ্বাস, ভালো-মন্দ সব মিলিয়েই এগিয়ে যাবেন চিকিৎসকরা।’

ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম, অধ্যাপক সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক রায়হানা আউয়ালসহ প্রত্যেক সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসক, এমনকি ওয়ার্ড বয়সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডা. সামন্ত। তিনি মনে করেন, শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি সবার আন্তরিকতা না থাকলে অস্ত্রোপচারগুলো সফল করা সম্ভব হতো না। তার কথায়, ‘একটি হাসপাতালের মূল চালিকাশক্তি হলো সবার আন্তরিকতা। এখানে কারও একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকে যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করে তাহলে সাফল্য আসবেই। আমাদের সব জটিল ব্যাপারগুলোতে এই আন্তরিকতা পেয়েছি। ওয়ার্ড বয়রা দৌড়ে গিয়ে রক্ত এনেছে। জুনিয়র চিকিৎসকরা দিনের পর দিন অক্লান্তভাবে মুক্তামনির দিকে খেয়াল রেখেছে।’

অপারেশনের পর হাসপাতালে তোফা ও তহুরা মুক্তামনির কেবিনে রবিবার সকালে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রবীণ এই চিকিৎসক। তখনকার পরিস্থিতি জানিয়ে বললেন, ‘মুক্তামনিকে সকালে দেখতে গিয়ে অনেকক্ষণ ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না! আমার চোখে ভেসে ওঠে এই হাসপাতালে মেয়েটির প্রথম দিনের ঘটনা। মুখে-শরীরে অপুষ্টির চিহ্ন, মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট, শরীরের চেয়ে ভারী হাত; সব মিলিয়ে সে বসতেও পারছিল না। অথচ এখন তার ওই হাতটা খোলা অবস্থায় রাখা যাচ্ছে। সেখানে নেই আগের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড। সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কল্যাণে।’

রবিবার বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালামসহ একাধিক চিকিৎসক মুক্তামনির কেবিনে গিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করেন, কথাও বলেন। তার পোকা ও পচন ধরা হাতটাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টাকে আনন্দের সঙ্গে ভাবতে থাকলেন তারা। তাদের কাছে এ যেন যুদ্ধজয়ের আনন্দ!

মুক্তামনির বাবা মো. ইব্রাহীম হোসেন ও মা আসমা খাতুনও আনন্দিত। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা বলেছেন, ‘শনিবার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর ভাবতেই পারিনি এটা আমার মেয়ের সেই হাত! যে হাত থেকে পচা গন্ধ আসতো, পোকা ঘুরে বেড়াতো। মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে বলে খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের।’

তোফা-তহুরা ও মুক্তামনি; বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাফল্যের গল্প শনিবার মুক্তামনিকে অজ্ঞান করা ছাড়াই ড্রেসিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ডা. সামন্ত বলেন, ‘এই বয়সে এতবার অস্ত্রোপচার ও অ্যানেসথেশিয়ার ধকল গেছে তার ওপর দিয়ে। এসব মাথায় রেখেই তাকে অজ্ঞান করিনি। এ কারণে কিছুটা কষ্ট তো পেয়েছেই মেয়েটি। কিন্তু নিজের হাত দেখে সেটি ভুলে গেছে সে।’

হাত দেখে মুক্তামনির নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! এই প্রতিবেদককে বিস্ময়ভরা অভিব্যক্তি নিয়ে সে বলেছে, ‘এটা কি আমার হাত! সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেই সবাইকে হাতটা দেখাবো। আমার কাছ থেকে এখন আর দূরে থাকতে চাইবে না। কালাম স্যার ও সেন স্যার বলেছেন, আমি পুরোপুরি সেরে উঠবো।’ কথাগুলো বলতে বলতে ভিজে উঠলো মুক্তার চোখজোড়া। তবে এই অশ্রুর সঙ্গে মিশে আছে আনন্দ।

এদিকে মুক্তামনির চিকিৎসা নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক আলোচনা ও তর্ক হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে ডা. সামন্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তামনির চিকিৎসা করতে সিঙ্গাপুর অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এছাড়া দেশের ভেতরে আমাদের শুনতে হয়েছে— মেয়েটার হাত না কেটে অস্ত্রোপচার আদৌ করতে পারবো কিনা। এখন আমরা বলছি, মুক্তার অস্ত্রোপচার হয়েছে হাত অক্ষুণ্ন রেখেই। বাকি কাজ করবো আরও কিছুদিন পর। তার আগে মেয়েটা আরেকটু সুস্থ হোক।’
আরও পড়ুন-
১০ টাকার টিকিটে সেবা পাচ্ছেন রোগীরা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ