X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্রয়কর্মী টুম্পাকে হত্যা করে তার সাবেক স্বামী

আমানুর রহমান রনি
১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৫৪আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৫৯

 প্রতীকী ছবি মোহাম্মদপুরের পোশাকের দোকানে ঢুকে বিক্রয়কর্মী রোকসানা আক্তার টুম্পাকে (২৬) তার সাবেক স্বামী সবুজ শেখই হত্যা করেছে বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। নিহত টুম্পার পরিবারও এমনটি দাবি করছে। তবে এখনও গ্রেফতার হয়নি সবুজ শেখ। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডের ২৩/এক্স নম্বর বাড়ির নিচতলার পোশাকের দোকানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

হত্যাকাণ্ডের বিষয় জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি মীর জামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টুম্পা যে দোকানে চাকরি করতেন, সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল। টুম্পাকে যেভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়, তা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। আমরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। রবিবার রাতেই ওই ফুটেজ টুম্পার পরিবারকে দেখিয়েছি। তারা নিশ্চিত করেছে টুম্পাকে যে ছুরিকাঘাত করেছে তার নাম মো. সবুজ শেখ। সে টুম্পার স্বামী ছিল। সবুজ ও টুম্পা প্রেম করে বিয়ে করে সাত বছর আগে। তারা মিরপুরে বাসা নিয়ে থাকত। বিয়ের পর টুম্পা জানতে পারেন, সবুজের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এরপর টুম্পা তাকে ডিভোর্স দিয়ে সাভারে তার বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়। দেড় মাস আগে মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডের ওই দোকানে চাকরি নেন টুম্পা। সবুজ তা জেনে যায় এবং সেখানে এসেই টুম্পাকে হত্যা করে।’

সবুজের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর। সে দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরেই আছে। কখনও পোশাক কারখানায় কাজ করে, কখনও ছুটা কাজ করে। নির্দিষ্ট করে কোনও কাজ সে করে না। টুম্পাকে সে প্রতারণা করে বিয়ে করেছিল বলেও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই পুলিশ টুম্পার পরিবারকে খবর দেয়। তার বাবা আবুল বাশার হাজারী ও ভাই সাভারের রেডিও কলোনিতে পরিবার নিয়ে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলায়। মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে রাতে বাবা ঢাকায় ছুটে আসেন। সোমবার সকালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে টুম্পার লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তিনি মোহাম্মদপুর থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ সবুজকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। এজন্য মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংসহ পুলিশ বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন মারফতে সবুজকে জানানো হয়েছে টুম্পা বেঁচে আছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

টুম্পার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই নিরস্ত্র) মো. মেজবাহ উদ্দিন। তিনি ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘১৫ অক্টোবর সকালে টুম্পা তার অন্য সহকর্মী ফারিয়ার সঙ্গে দোকান পরিষ্কারের কাজ করছিলেন। সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে সবুজ দোকানে প্রবেশ করে। এসময় তারা দুজন পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকে। একসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। টুম্পার হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সবুজ। টুম্পা তখন তাকে বাধা দেয়। তখন সবুজ তার প্যান্টের পকেটে থাকা চাকু বের করে টুম্পার ঠোঁটের বামপাশের নিচে, গলার বামপাশে মাঝামাঝি স্থানে, বাম হাতের মাঝখানের আঙুলে আঘাত করে। এরপর সে পালিয়ে যায়। এরপর ফারিয়া চিৎকার করলে এবং মালিককে বিষয়টি জানালে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে দোকানের মালিক ফাহিমের খালাতো ভাই বাবর টুম্পাকে রক্তাক্ত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

নিহত টুম্পার বাবা আবুল বাশার খলীফা জানান, ‘টুম্পাকে প্রতারণা করে বিয়ে করেছে সবুজ। তাকে ডিভোর্স দেওয়ার পরও টুম্পাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতো সে। এমনকি তাকে দোকানে গিয়ে হত্যা করে। আমরা ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখেছি।’ মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান  হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পোশাকের দোকানটি দুই মাস আগে চালু হয়েছে। এখানে শুধু নারীদের থ্রি-পিস বিক্রি করা হয়। দোকানে দু’জন নারী বিক্রয়কর্মী ছিলেন। একজন টুম্পা, অন্যজন ফারিয়া। প্রতিদিনের মতো তারা রবিবারও দোকান খোলেন। এসময় দোকানে ঢুকে টুম্পাকে হত্যা করা হয়।’

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দুই মাস দোকানের বয়স হলেও টুম্পা সেখানে দেড়মাস ধরে কাজ করছিলেন। মালিক ফাহিম ব্যবসার পাশাপাশি একটি চাকরিও করেন। তিনি প্রতিদিন রাতে হিসাব নেন। ঘটনার সময় বিক্রয়কর্মী দু’জনই ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘টুম্পার বাবা এলে তার সঙ্গে আলোচনা করে মামলা দায়ের করা হবে। আমরা দোকান থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অপরাধীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

 

/এআরআর/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী