X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

হার্টের রিং নিয়ে ভোগান্তি কমেনি রোগীদের

জাকিয়া আহমেদ
০২ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২৪আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৩

হার্টের রিং সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে হার্টের রিং। তবে এর সঙ্গে থাকা অন্য এক্সেসরিজগুলোর মূল্য কমেনি। বরং বিভিন্ন অজুহাতে এসবের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। তারচেয়েও গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, খোদ চিকিৎসকরাই নির্ধারিত দামের বাইরে থাকা রিং কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে রোগীরা উচ্চমূল্যের সেসব রিং কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিং পরানোর জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতির দাম নির্ধারিত না হওয়ায় রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করার সুযোগ রয়ে গেছে। এছাড়া, কিছু চিকিৎসকের বেশি দামি রিংয়ের প্রতি ‘রহস্যজনক’ আগ্রহও হার্টের রোগের চিকিৎসায় ব্যয় কমানোর সরকারের উদ্যোগের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগে দেশের হাসপাতালগুলোয় হার্টের রিংয়ের দামে ছিল বিস্তর ব্যবধান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জীবন রক্ষাকারী এ রিংয়ের দাম নির্ধারণের দাবি উঠলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর গত ১৮ এপ্রিল ১৭ সদস্যের একটি কমিটি করে। কমিটি ৪৭ ধরনের ২৮টি ব্র্যান্ডের হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে নির্ধারিত ওই দামে রোগীদের কাছে রিং বিক্রির নির্দেশ দেয়। অধিদফতর হার্টের রিংয়ের দাম সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হতে হবে বলেও নির্ধারণ করে দেয়।

অধিদফতর থেকে প্রতিটি হাসপাতালে রিংয়ের দাম সংবলিত নির্দেশিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসন থেকে নির্ধারিত হার্টের রিংয়ের বর্তমান মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, সর্বনিম্ন ১০ হাজার ৯৪৬ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৮ টাকার রিং রয়েছে। করোনারি স্টেন্ট বা রিং আমদানি সর্ম্পূণ শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত। পরিশোধ করতে হয় না অগ্রিম আয়করও। 

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালগুলোয় কিছু চিকিৎসক বেশি দামি রিং ও যন্ত্রপাতির প্রতি রোগীদের প্রলুব্ধ করছেন। অথচ কয়েক হাজার টাকা কম বা বেশি দামের রিংয়ের মান প্রায় একই। সাধারণত, রোগী বা তার স্বজনরা চিকিৎসকের কাছেই কোন  রিং কিনবেন জানতে চান। এ সুযোগটিই নেন একশ্রেণির চিকিৎসক এবং ব্যবসায়ীরা। রোগীকে সংকটাপন্ন অবস্থায় রেখে তার স্বজনদের পক্ষে তখন দরদাম বা মান বিচার করার মতো সময় এবং মানসিকতাও থাকে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যে স্টেন্টের দাম ৫০ হাজার টাকা, সেই একই স্টেন্টের দাম ভারতে ৩৬ হাজার টাকার মতো। বাংলাদেশে বছরে ১৮ হাজারের মতো স্টেন্ট লাগানো হয়। এই চাহিদার কারণেই রোগীদের জিম্মি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এ খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে।’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অ্যাডোব’ কোম্পানির একটি রিংয়ের দাম এক লাখ ১২ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। প্রায়ই রোগীদের এ রিং পরাতে চিকিৎসকদের বেশ আগ্রহী দেখা যায়–এটি একেবারেই অনৈতিক। এসব চিকিৎসক রোগী এবং তার স্বজনদের বুঝিয়ে থাকেন, অ্যাডোবের রিং বেশি ভালো।যদিও এটি প্রমাণের কোনও মাপকাঠি নেই। কিন্তু আমরা জানি, দাম কম এমন অনেক কোম্পানির রিংয়ের বেশিরভাগই ভালো।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনও বিশেষ কোম্পানির বিশেষ রিংয়ের কথা রোগীদের বলার কোনও অবকাশ নেই। অথচ কিছু চিকিৎসক সেটাই করছেন। রোগীকে তারা বলছেন, “আপনার জন্য এই কোম্পানির এই রিংটি প্রযোজ্য”–এটি চিকিৎসা পেশার নৈতিকতাবিরোধী। বিশেষ কোম্পানির বিশেষ ব্র্যান্ডের প্রতি চিকিৎসকদের দুর্বলতা থাকার কোনও অবকাশ নেই।

চিকিৎসকরা বলেন, দামি রিং পরানোর প্রয়োজন হয় যখন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ থাকে, হৃদরোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য জটিলতা থাকে। সাধারণত, রোগীর হার্টের ব্লক জটিল অবস্থায় থাকলে রিংয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন। কিন্তু সব ধরনের রোগীর বেলায় দামি রিং প্রয়োজন হয় না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক বলেন, সরকারি হাসপাতালে কম দামে কম খরচে স্টেন্ট লাগানোর জন্যই দরিদ্র, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা আসেন। কিন্তু এভাবে যদি দামের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চিকিৎসকরা নিজেদের মুনাফার জন্য বেশি দামের রিং কিনতে রোগীদের বাধ্য করেন তাহলে রোগীদের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কিছু চিকিৎসক বেশি দামি রিং কিনতে রোগীদের প্রলুব্ধ করছেন–এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরের একাধিক স্থানের নোটিশ বোর্ডে রিংয়ের মূল্য তালিকা দেওয়া রয়েছে। চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে বলা আছে। এর অন্যথা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
‘আওয়ামী লীগের অর্জিত সুনাম ছাত্রলীগের একদিনের অপকর্মেই ধ্বংস হয়ে যায়’

/এএম/আপ-এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা