মাদক থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে অবশেষে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর খেলার মাঠ খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খেলার মাঠগুলো খেলাধুলার উপযোগী করে অগ্রগতি প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ আমরা আগেই দখলমুক্ত করেছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ দ্রুত দেশের সব জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে দেবো। এছাড়া আমরা খেলার মাঠ খেলাধুলার উপযুক্ত কিনা, তা নিয়মিত মনিটরিং করবো। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠ দখলমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) প্রস্তাব দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের এ প্রস্তাব পাঠানো হয়।
মাদকদ্রব্য অধিদফতরের ওই প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের শহরগুলোতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকায় তরুণরা খেলাধুলা করতে পারছে না। এতে মাদকের প্রতি ঝুঁকছে শিক্ষার্থী ও তরুণরা। দিনের নির্দিষ্ট সময় খেলার মাঠ উন্মুক্ত ও অবারিত থাকলে তরুণরা খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে নির্দেশনা (অনুশাসন) জারি করে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের গত ১৯ মার্চ পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুপরিসর খেলার মাঠ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব খেলার মাঠ খেলাধুলার উপযোগী না থাকায় শিক্ষার্থীরা বা স্থানীয় যুবসমাজ মাঠ ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেরই অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য খেলার মাঠগুলো খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তোলার কার্যক্রম নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এই নির্দেশনা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকেও পাঠানো হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এর বড় অংশই শিক্ষার্থী। বর্তমানে দেশে মাদক হিসেবে ইয়াবা ট্যাবলেট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের মোট মাদকাসক্তের ৭০ শতাংশই ইয়াবা আসক্ত। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এর বড় অংশই আবার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী প্রচারণা জোরদার ও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।