X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, রাজধানীর ১৯ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ

তাসকিনা ইয়াসমিন
২২ জুলাই ২০১৮, ০৭:৫৯আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৮, ১৬:০৯

ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি রোগী

বর্ষা মৌসুমে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একটু বেশিই লক্ষ্য করা যায়। এসময় মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় এমনটি ঘটে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এ মাসে (জুলাইতে) এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৩৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী। গত দু’মাসে এই রোগে অন্তত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর তুলনায় চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব কম হলেও রাজধানীর ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

ভারী বর্ষণের ফলে এডিস মশাবাহিত রোগ আরও  ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জনগণকে সতর্ক করেছে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ঢাকায় প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। এ সময়কে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম ধরা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বেড়ে গেছে। 

অন্যদিকে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি এক অভিযানে ১৮টি বাড়ির মধ্যে ১১টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মিলছে লার্ভা। তাদের হিসাব মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল গত মে মাসে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়– চিহ্নিত ১৯টি  এলাকায় চিকুনগুনিয়া বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য দুই সিটির যেসব এলাকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আছে বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে— ধানমন্ডি ১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জুলাই মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর কোনও তথ্য আমরা পাইনি। গত জানুয়ারিতে একজন চিকুনগুনিয়া রোগীর তথ্য পেয়েছিলাম। এ বছর ডেঙ্গুর রোগী ঢাকায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে (২০ জুলাই) পর্যন্ত ৩৬৪ জন ভর্তি হয়েছে। জুনে তিন জন ও জুলাইয়ে তিন জন, অর্থাৎ এই দুমাসে ডেঙ্গু রোগে ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘জুন মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হন ৭০৯ জন রোগী।’ 

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ার কোনও রোগী ভর্তি নেই। তবে ডেঙ্গু রোগী আছে। আমি এই মুহূর্তে সঠিক হিসাবটা বলতে পারবো না। তবে সংখ্যায় পাঁচ/ছয় জনের উবেশি না। প্রতি বছরের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা কম। গত বছর চিকুনগুনিয়ার অনেক রোগী ছিল। এবারে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের রোগী পাইনি। আউটডোরের চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, রোগী আসছে তবে ডেঙ্গু রোগী তেমন বেশি না।’ 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন এই রোগীরা আসছে। তবে খুব বেশি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পেয়েছিলাম বেশি। যারা এ রোগে আক্রান্ত হন তাদের ফিজিওথেরাপি লাগে। রিকোভারি করতে সময় লাগে। এবারও যদি এমন হয় তাহলে আমরা তাদের সেভাবে ম্যানেজ করবো। আমরা প্রস্তুত।’ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদালয়ের (বিএসএমএমইউ)পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা কোনও ডেঙ্গুর রোগী পাইনি। এর আগে এই সিজনে ২১ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। চিকুনগুনিয়ার কোনও রোগী এখনও পাইনি। ডেঙ্গুর জন্য কেবিন ব্লকে আমরা চারটি বেড আলাদা করে প্রস্তুত রেখেছি।’ 

বিএসএমএমইউ এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশা বাড়লে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এগুলো বাড়ে। তবে একবার আক্রান্ত হলে এই রোগ সাধারণত দ্বিতীয়বার হয় না। এই রোগ প্রতিরোধে মশা নিধন করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, ঘরের আনাচে-কানাচে, আঙিনা বা বারান্দায় ফুলের টব থাকলে এগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের প্রটেকশন নিজেকেই নিতে হবে। শোয়ার সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন মশা না কামড়ায়। শিশুরা যারা হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে, তারা ফুলপ্যান্ট পরবে। মোটকথা, মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে ঘরের বাইরের মশা মারার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’




 

 

 

/টিওয়াই/আইএ/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসককে শোকজ
প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসককে শোকজ
ভৈরবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে একজন গ্রেফতার
ভৈরবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে একজন গ্রেফতার
গরু কিনতে যাওয়ার পথে বাবা-ছেলে নিহত
গরু কিনতে যাওয়ার পথে বাবা-ছেলে নিহত
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?