X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসসিসিতে অফিস না করেই বেতন ভাতা!

শাহেদ শফিক
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:২৮আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:২৪

ডিএসসিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী সচিবের দফতরে কর্মরত এক কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করে বেতন ভাতা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির সহকারী সচিব কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শাহানুরী নামের ওই কর্মচারীকে তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন।

শাহানুরীর ডিজিটাল হাজিরা তথ্যানুযায়ী, গত সাড়ে ৩৩ মাসে তিনি অফিস করেছেন মাত্র ১৪২ দিন। অর্থাৎ, প্রতিমাসে তিনি গড়ে চার দিন অফিসে ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ৩৩ মাসের মধ্যে ১০ মাসে তিনি একদিনও অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। আর পাঁচ মাসে মাত্র একদিন করে অফিসে হাজির ছিলেন।

তবে তার এই হাজিরা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে সচিবের দফতরের অন্য স্টাফদেরও। তারা বলছেন, কম্পিউটার অপারেটর শাহানুরীকে কখনও অফিসে দেখা যায় না, হাজিরা দিয়েই তিনি চলে যান। অভিযোগ আছে, ডিএসসিসিতে ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেম চালু থাকলেও তা যাচাই না করেই তাকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি শাহানুরীকে উচ্চ গ্রেডের পদে বসানোর কাজ চলছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দফতরের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে ডিএসসিসির ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে (ডিইউটিপি) চুক্তিভিত্তিক যোগদানের পর ২০০১ সালের দিকে শাহানুরীকে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনে (টিইডি) আত্তীকরণ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি বিভাগের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। এরপর তাকে সচিব দফতরের সংস্থাপন-২ শাখায় সংযুক্ত করা হয়। তখন থেকে তিনি ওই শাখায় নিয়োজিত থাকলেও নিয়মিত অফিস করছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট শাহানুরী স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তার প্রশ্রয়দাতা সহকারী সচিব কামাল হোসেন আবেদনপত্রটি কার্যকর হতে দেননি বলে অভিযোগ আছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ডিএসসিসিতে ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেম পরীক্ষামূলক চালু হলেও তা কার্যকর করা হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে।

ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেম পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচিত কর্মচারী শাহানুরী ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ১০ দিন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ দিন, মার্চে ১০ দিন, এপ্রিলে ৬ দিন ও মে মাসে ১০ দিন অফিস করেছেন। জুন মাসে তিনি একদিনও অফিস করেননি। জুলাইয়ে হাজিরা দিয়েছেন একদিন। আবার আগস্টে একদিনও কর্মস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পাঁচ দিন,অক্টোবরে চার দিন, নভেম্বরে পাঁচ দিন ও ডিসেম্বরে মাত্র দুদিন অফিস করেছেন তিনি। দেখা যায়, ২০১৬ সালে তিনি মাত্র ৫৯ দিন অফিস করেছেন।

শাহানুরী একইভাবে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একদিন, ফেব্রুয়ারিতে আট দিন, মার্চে দুদিন ও এপ্রিলে তিন দিন অফিস করেছেন। মে মাসে একদিন অফিস করে পুরো জুন মাস অনুপস্থিত ছিলেন। জুলাই মাসে একদিন অফিস করলেও আগস্ট মাসে অফিসে হাজির ছিলেন না। সেপ্টেম্বরে একদিন অফিস করেছেন। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অফিস করেননি। ২০১৭ সালের তিনি অফিস করেছেন মাত্র ১৭ দিন।

ডিজিটাল হাজিরা তথ্যানুয়ী দেখা যাচ্ছে, শাহানুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চার দিন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দিন, মার্চে ১৭ দিন ও এপ্রিলে ১৪ দিন অফিসে হাজিরা দিয়েছেন। মে ও জুন মাসে অনুপস্থিত থেকে জুলাই মাসে ছয় দিন অফিসে ছিলেন। আবার আগস্ট মাসে আট দিন এবং এ মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট দিন অফিস করেছেন। অর্থাৎ এ বছর ৯ মাসে তিনি অফিসে হাজির ছিলেন ৬৬ দিন।

সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৩ মাসে শাহানুরী অফিসে হাজির ছিলেন মাত্র ১৪২ দিন। অবশ্য এরমধ্যে জাতীয় দিবস ও সাপ্তাহিক দুদিন করে তার ছুটি রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া তিনি পুরো সময়ের মধ্যে মাত্র ৩৮ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। আর ১০৫ দিন অফিসে দেরি করে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করে দফতরের একাধিক কর্মচারী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কম্পিউটার অপারেট শাহানুরী নিয়মিত অফিস করেন না। মাঝে মধ্যে এসে ডিজিটাল হাজিরা দিয়ে চলে যান। অফিসের অনেক সহকর্মী তাকে ভালোভাবে চেনেনও না। একজন সহ-সচিবের সঙ্গে সখ্য থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না।’

এ বিষয়ে জানতে শাহানুরীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে শাহানুরী বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিস করি। হয়তো ডিজিটাল মেশিনে সমস্যা হতে পারে। অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখতে হবে।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসির সহকারী সচিব-২ মো. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শাহানুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক না। আসলে অনেকেই আছেন, যারা ডিজিটাল মেশিনে হাজিরা দেন, কিন্তু তা সঠিকভাবে হয় না। আবার সঠিকভাবে দিলেও হিসাব হয় না। ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স কখনও কার্যকর ছিল, আবার কখনও শিথিল ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত সম্প্রতি কয়েকজন কর্মচারীর তালিকা করা হয়েছে, যাদের উচ্চতর গ্রেডের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই কর্মচারীরা অনেক আগে থেকেই ওই দায়িত্ব চেয়ে আসছেন। এ নিয়ে হয়তো তার সঙ্গে অন্যদের দ্বন্দ্ব হতে পারে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম