X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুঁটি আছে ক্যামেরা নেই

আমানুর রহমান রনি
১২ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১০আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৭




রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে একটি খুঁটিতে সতর্ক বার্তা আছে কিন্তু ক্যামেরা নেই রাজধানীর আজমপুর চৌরাস্তার মাঝখানের সড়কদ্বীপে একটি খুঁটি দাঁড়িয়ে। সেটির সঙ্গে ঝোলানো রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি ছোট্ট নির্দেশিকা। তাতে একটি সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ছবি রয়েছে। ওপরে ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে ‘ওয়ার্নিং।’ ক্যামেরার নিচে লেখা ২৪ ঘণ্টা ভিডিওতে নজরদারী করা হয়। একশ মিটার সেফ জোন। তবে খুঁটির সঙ্গে একটিও ক্যামেরা নেই। রাজধানীর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার একটি জায়গার অবস্থা এমন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে নতুন করে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং এলাকাটি পুলিশের নজরদারিতে আছে। অপরদিকে, বাবুবাজারের সিসিক্যামেরা বন্ধ। ডিএমপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো নজরদারিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কাযর্ক্রম চলমান প্রক্রিয়া। এটার প্রকল্প চলছে। দ্রুত আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।    

শনিবার (১০ নভেম্বর) সকালে আজমপুর চৌরাস্তায় গিয়ে সিসি ক্যামেরার খুঁটিতে কোনও সিসি ক্যামেরা দেখা যায়নি। তবে আজমপুরের বিভিন্ন দোকানের সামনে সিসি ক্যামেরা দেখা গেছে। ডিএমপি জানিয়েছে, আজমপুরের ওই খুঁটির ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়েছে। পরবর্তীতে চারটি ক্যামেরা ওই এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো এখন কাজ করছে।

সররেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তত্ত্বাবধানে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার কোঅর্ডিনেশন কমিটির’ আওতায় পাবলিক-প্রাইভেট প্রজেক্টের মাধ্যমে বসানো সিসি ক্যামেরার প্রায় অর্ধেকই নষ্ট বা অকার্যকর। সচল থাকা ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ফুটেজও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট। এছাড়া লোডশেডিংয়ের সময় বেশিরভাগ ক্যামেরা না চলায় ওই সময়ের ফুটেজও পাওয়া যায় না। পিংক সিটি এলাকায় পাওয়ার সাপ্লাইয়ারের সমস্যার কারণে ক্যামেরাগুলো ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না। বিভিন্ন ঘটনায় এসব সিসি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ফুটেজ অস্পষ্ট হওয়ায় ক্যামেরার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ছয়মাস-একবছর পর ক্যামেরাগুলোর ধারণ করা চিত্র অস্পষ্ট হয়ে যায়। তবে বর্তমানে নতুন ক্যামেরায় এই সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

গাবতলীতে একটি হেলে পড়া খুঁটি ডিএমপ’র সদর দফতর জানিয়েছে, ডিজিটাল পুলিশিং ও রাজধানীতে জঙ্গি হামলা, সহিংসতা, খুন, ছিনতাই ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মহানগরীতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দিকে সহস্রাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। এই কাজে বিভিন্ন হাউজিং, সোসাইটি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিএমপিকে সহযোগিতা করে। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ১২টি প্রবেশপথে বসানো হয় ৯৪টি আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরা। তবে সেগুলো এখন প্রায় অকেজো। কেবল গুলশান এলাকার সিসি ক্যামেরাগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে। বাকিগুলোতে ত্রুটি রয়েছে। গুলশান, উত্তরা, গাবতলী এলাকার ক্যামেরার নজরদারি করা হয় গুলশান পুলিশ ফাঁড়িতে। অপরদিকে, বাবুবাজারের মনিটরিং হয় ডিএমপিতে। প্রয়োজন অনুযায় মনিটরিং ব্যবস্থা অন্যত্রও স্থানন্তর করতে পারে কন্ট্রোল রুম।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজমপুরের চৌরাস্তায় ওই খুটিতে সিসি ক্যামেরার কী হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না। তবে আমি ওই এলাকায় অনেক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। সেগুলো কাজ করছে।’

উত্তরা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর, হাউজ বিল্ডিং থেকে ১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তা এবং রাজলক্ষ্মী থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত সড়কে দোকানে বাসাবাড়িতে বিভিন্ন ক্যামেরা রয়েছে। যা নিরাপত্তায় সহযোগিতা করছে। তবে আবদুল্লাহপুর থেকে জসিমউদ্দিন পর্যন্ত বেশকিছু ক্যামেরা খোয়া গেছে এবং কিছু অকেজো হয়েছে তার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু ক্যামেরার ওপরে ধুলোর আস্তরণ দেখা গেছে।

অপরদিকে, শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকালে গাবতলী গিয়ে দেখা গেছে, গাবতলী পুলিশ বক্সের সামনের সড়কের আইলাইনে একটি সরু খুঁটিতে লাগানো আছে ছয়টি সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা। আমিনবাজারের দিকে খুঁটিটি হেলে পড়েছে। ফলে সড়কের দিকে মুখ করা ক্যামেরাগুলোর লক্ষ্য এখনও উল্টাপাল্টা হয়ে আছে। এছাড়াও ধুলোয় ক্যামেরার মুখগুলো ঢেকে আছে। ডিএমপি জানিয়েছে, যে ট্রাকটি এই খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এর জরিমানা আদায় করা হবে।

গাবতলীতে একটি খুঁটির মাথায় ক্যামেরা থাকলেও তা অকেজো ডিএমপির লজিস্টিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কিছু এলাকার ক্যামেরার ত্রুটি রয়েছে। কারণ সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর ধীরে ধীরে এগুলো অস্পষ্ট হতে থাকে। তবে বর্তমানে হাই-রেজ্যুলেশনের ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী, চিটাগাংরোড এলাকায় সেভাবে মনিটরিং নেই। তবে উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পযন্ত ডিএমপি ক্যামেরা স্থাপণের কাজ চলছে। শিগগিরই যাত্রাবাড়ীর কাজলাতে ক্যামেরা স্থাপণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

অন্যদিকে, বাবুবাজারে ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো একটি নিরাপত্তা বাহিনীর অনুরোধে বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে তারা কাজ করছে। তাই সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার পর অপরাধ হ্রাস পেয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতেও কাজে লাগছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। তাই এবিষয়ে ডিএমপি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে অর্থ, লজিস্টিক সাপোর্ট ও জনবলের কারণে এই প্রজেক্ট দ্রুত গতিতে আগাচ্ছে না।

ডিএমপির সিস্টেম অ্যানালিস্ট কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজমপুরে আমাদের সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওই এলাকাটি মনিটরিং করা হয়। গুলশান, উত্তরা, গাবতলী, বাবুবাজারেও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ডিএমপি এ নিয়ে কাজ করছে। কিছু জায়গায় পাওয়ার সাপলাইয়ের সমস্যা এবং অন্য কিছু কারণে মাঝেমাঝে ত্রুটি দেখা দেয়। তবে তাও ভবিষ্যতে থাকবে না।’

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
চাইলেই কি বনের আগুন প্রতিরোধ সম্ভব
একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
সরকার বিনিয়োগকারীদের সব সুবিধা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর: পরিবেশমন্ত্রী
সরকার বিনিয়োগকারীদের সব সুবিধা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর: পরিবেশমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
কারিনাকে নিজ পরিবারে স্বাগত জানালেন প্রিয়াঙ্কা
কারিনাকে নিজ পরিবারে স্বাগত জানালেন প্রিয়াঙ্কা