X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

শোডাউন করে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ আইনসন্মত!

এমরান হোসাইন শেখ
১২ নভেম্বর ২০১৮, ২২:১৭আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০৯





আ. লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যাওয়া এক নেতার সমর্থকদের শোডাউন (ছবি: হাসান ইমাম) সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শোডাউন করে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘন কিনা তা নিয়ে দ্বিধান্বিত খোদ নির্বাচন কমিশন। কমিশনের একটি অংশ মনে করে, তফসিল ঘোষণার পর কার্যত কারো পক্ষে কোনও ধরনের সভা-সমাবেশ ও শোডাউনের সুযোগ নেই। এটা স্পষ্টত আইন ও আচরণবিধি লঙ্ঘন। অপর অংশের মতে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি দল ও দলের মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু কে বা কারা প্রার্থী, এই মুহূর্তে তা নির্ধারিত নয়। ফলে এখন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি কোনও দলের ওপর বর্তালেও কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ওপর বর্তাবে না। কারণ, যারা শোডাউন করে কোনও দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন তারা যে সেই দলের প্রার্থী হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


এদিকে বিষয়টি নিয়ে কমিশনে বিভক্তি থাকলেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নামে শোডাউন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশের আইজিকে নির্দেশনা দিয়ে এ ধরনের একটি চিঠি সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রস্তুত করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সোমবার রাতে বা আগামীকাল মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই তা পাঠানো হতে পারে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ সোমবার শেষ হয়েছে। অন্যদিকে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিতরণ। জাতীয় পার্টির ফরমও বিতরণ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসি এই নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে।
নির্বাচনি আচরণবিধি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রচারণার ক্ষেত্রে এর ৬ থেকে ১৪ বিধির বিধানসমূহ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। এই বিধির ১২ বিধিতে (প্রাচারের সময়) বলা হয়েছে, ‘কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করিতে পারিবেন না।’
৮ (খ) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোন প্রকার মিছিল কিংবা শোডাউন করিতে পারিবে না।’
এই বিধানমতে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে মূলত নির্বাচনি প্রচারের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দলের বিষয়টি স্পষ্ট থাকলেও প্রার্থীতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একাধিক কমিশনার ও কমিশনের কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, কোনও দল বা তার মনোনীত প্রার্থীর ক্ষেত্রে আচরণ বিধি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু দলের মনোনয়নপত্র যারা সংগ্রহ করছে তারা প্রার্থী হবে— এমন নিশ্চয়তা তো নেই। কোনও ব্যক্তির দলের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ার আগে কোনোভাবেই দল মনোনীত বলার সুযোগ নেই। এছাড়া প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ারও বিষয় রয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট কোন নির্বাচনি এলাকায় কোনও প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে ভোট চাইলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়তে পারে। কিন্তু কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোনও প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইলে তাকে আটকানোর সুযোগ নেই। তবে কোনও দল এই ধরনের কাজে লিপ্ত হলে তা সুস্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়বে। কাজেই এখন কোনও ব্যক্তি কোনও দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তাকে ওই দলের প্রার্থী বলা যাবে না। কাজেই তার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য শোডাউনকে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলার সুযোগ নেই। এদিকে ৮ ধারায় মনোনয়নপত্র দাখিলের যে কথাটি বলা হয়েছে সেটা রিটার্নিং অফিসে দাখিলের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
অন্যদিকে কমিশনের অন্য অংশ বলছে, আচরণবিধিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে কোনও দল, প্রার্থী বা তাদের পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তি প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন হিসেবে এই সময় কেউ মনোনয়নপত্রে সংগ্রহের নামে শোডাউন করুন বা অন্য কোনোভাবে প্রচারণায় অংশ নিলে সেটা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়বে। আর এই বিধান বলে কমিশন সোমবার পুলিশপ্রধানকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে ১০ নভেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ আচরণবিধি লঙ্ঘন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে এই শোডাউন হচ্ছে। আর আমাদের এখানে ভোট মানে উৎসব। কাজেই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে যে শোডাউন হচ্ছে তা আমাদের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে প্রতীয়মান হয়নি।’
জানতে চাইলে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিডিউল ঘোষণার পর কোনও ধরনের প্রচারণা বা শোডাউনের সুযোগ নেই। এই ধরনের শোডাউনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও দল যদি প্রচারণায় অংশ নেয় বা শোডাউন করে সেটাকে আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘন বলতে পারি। কিন্তু কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা এই মুহূর্তে আমরা কোন আইনে বলবো? কারণ ওই ব্যক্তি যে ওই দলের মনোনয়ন পাবেন সেই নিশ্চয়তা তো নেই। তাছাড়া কোনও ব্যক্তির চলার পথে যদি তার পেছনে শত শত লোক শরিক হয় এর জন্য তার দায় নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সংবিধানে চলাফেলার যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে উল্টো সেটা আমরা লঙ্ঘন করবো।’ এক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির পক্ষে কেউ ভোট চাইলেও নিবৃত করার সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে  জিজ্ঞাসাবাদ
ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি