রাজধানীর ওয়ারী থানা এলাকার গোয়ালঘাটে একটি দোকান থেকে দু’টি তাজা ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় তিন কারণ সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ। কারণগুলো হলো—নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতার উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরক রাখা হয়েছে কিনা, মার্কেটের মালিক ও ভাড়াটিয়ার পুরনো বিরোধের জের কিনা এবং অজ্ঞাত নম্বর থেকে এসএমএস-দাতা এসব সরঞ্জাম বিষয়ে জানলেন কীভাবে? ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, দু’টি আইইডি এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন গোয়ালঘাটে লেনের ১২/১ আব্দুস সাত্তার মার্কেটের একরাম মোটরস নামের একটি দোকান থেকে দু’টি তাজা আইইডি, ডেটোনেটর ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং পাশের নাদিম এন্টারপ্রাইজ নামের দোকান থেকে অস্ত্রের যন্ত্রাংশ উদ্ধার করে ওয়ারী থানা পুলিশ। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আইইডি দু’টি নিষ্ক্রিয় করে।
ঘটনার পর থেকে দোকান মালিক একরামুল পলাতক। তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই বিষয়ে পুলিশের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গতকাল (শুক্রবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমরা একটি এসএমএস পাই। সেখানে বলা হয়, ‘গোয়ালঘাটের একটি দোকানে বোমা আছে, ১৬ ডিসেম্বর ও আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনও নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বোমা রাখা হয়েছে।’ এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রাতেই গোয়ালঘাট লেনের ১২/১ আব্দুস সাত্তার মার্কেটের অভিযান পরিচালনা করি।’’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশের টিম সেখানে নাদিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি করে। তবে সেখানে কিছুই মেলেনি। পরে আমাদের ফোর্স ফেরত আসে। পরে শনিবার সকালে আমরা আবার ওই মার্কেটে তল্লাশি চালাই। সেখানে একরাম মোটরস নামের একটি দোকানে তল্লাশি শুরু করা হয়। ওই দোকানে শাটারের কাভার খুলতেই কিছু একটা সন্দেহজনক দেখতে পাই। এরপর দ্রুত গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে দু’টি তাজা আইইডি ও ডেটনেটর বলে শনাক্ত করেন। এরপর ওই দোকানে তল্লাশি করে ক্যাশ টেবিলের ভেতর থেকে বোমার আরও কিছু অংশ উদ্ধার করে।’’
পুলিশের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এরপর পাশের দোকান নাদিম এন্টারপ্রাইজে শাটারের কাভারের ভেতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের কিছু অংশ পাওয়া য়ায়। এগুলো দেশে তৈরি করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ঘটনা সম্পর্কে জানা গেছে, এই মার্কেটের মলিক মো. হাসান আলী রনি ও ভাড়াটিয়া দোকান মালিক একরামুল হকের মধ্যে আগে থেকে একটা বিরোধ আছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। এছাড়া অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নম্বরের মালিক কীভাবে এ তথ্য জানলেন? এদিকে নির্বাচনন্দ্রিক কোনও নাশকতার উদ্দেশ্য আছে কিনা? এই তিনটি বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে।’
পুলিশের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আপাতত এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হবে। এই মুহূর্তে কোনও আসামিকে আটক করা হয়নি। তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, আব্দুস সাত্তার মার্কেটের এক অংশের মালিক মো. হাসান আলী জনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘জোর খাটিয়ে এই একরামুল হক আমার দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। তিনি গত দুই বছর যাবৎ আমাকে দোকানের ভাড়া দেন না। এলাকায় তিনি মাস্তানি করেন। তাকে কিছু বলা যায় না।’ তার অভিযোগ, ‘সাধারণত সকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে। কিন্তু একরাম এই নিয়ম না মেনে রাত ২টা আড়াইটা পর্যন্ত তার দোকান খোলা রাখতেন। এখানে মাস্তানরা মিলে আড্ডা দিত। বাধা দিলেই তিনি ভয়ভীতি দেখাতেন।’
দোকানের মালিক একরামুলের নামে আগে অস্ত্র মামলাও রয়েছে বলে দাবি করেন মার্কেট মালিক জনি। তিনি আরও বলেন, ‘সে গোপনে গোপনে পিস্তলের পার্টস তৈরি করে বাইরে সাপ্লাইও দেন।’
এ বিষয়ে মার্কেটের অন্যপাশের দোকানি নাদিম হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এই ঘটনার কারণ জানতে তাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাত ১টার দিকে আমার দোকানে পুলিশ তল্লাশি করে গেছে। তখন কিছুই পায়নি। পরে সকালে আবার পুলিশ এসে তল্লাশি করে আমার দোকানের শাটারের কাভারের ভেতর থেকে অস্ত্রের পার্টস ও একরামের দোকানের শাটারের কাভার থেকে নাকি বোমা পাইছে। এই ঘটনার সময় আমি মার্কেটে ছিলাম না। পরে আমার এক ভাগিনা ফোন করে জানায় এসব।’
নাদিম হোসেন বলেন, ‘হয়তো কেউ চাল খাটিয়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। কারণ, বন্ধ দোকানের শাটারের কাভারের ভেতর থেকেও অস্ত্রের পার্টস পেয়েছে পুলিশ। হতেও পারে কেউ এসে রেখে দিয়ে চলে গেছে। এটা কারও ষড়যন্ত্র হতে পারে।’ তিনি এমন কোনও কাজ করেন না বলেও দাবি করেন।