X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত

সু্বর্ণ আসসাইফ, জবি
৩১ জুলাই ২০১৯, ২৩:৩০আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০





ক্যাম্পাসের গুচ্ছ ভাস্কর্য চত্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার বলছে একশ’র বেশি। নির্দিষ্ট সংখ্যা তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।












মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত আক্রান্ত ৯৭ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আইন বিভাগের ১১ জন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৭জন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৬জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৫ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫জন, ফার্মেসি বিভাগের ৪জন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪জন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৪জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪জন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩জন, ইতিহাস বিভাগের ৩জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৩ জন, গণিত বিভাগের ৩জন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২জন, মার্কেটিং বিভাগের ২জন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২জন, নাট্যকলা বিভাগের ২জন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২জন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ২জন, অর্থনীতি বিভাগের ২জন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২জন, ইংরেজি বিভাগের ১জন, সমাজকর্ম বিভাগের ১জন, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ১জন, সংগীত বিভাগের ১জন, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ১জন, রসায়ন বিভাগের ১জন, বাংলা বিভাগের ১জন, অনুজীব বিজ্ঞানের ১জন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ১জন, দর্শন বিভাগের ১জন, মাইক্রোবায়োলজিতে ১জন, বায়োকেমিস্ট্রিতে ১জন, ইংরেজি বিভাগে ১জন ও সিএসই বিভাগের ১জন ও পরিসংখ্যান বিভাগে ১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন মিটফোর্ড হাসপাতাল, ক্যাম্পাসের পাশের সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। শিক্ষার্থীদের একাংশের পক্ষ থেকে ছুটির আবেদন করা হলেও নাকচ করে দেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসা কর্মকর্তা মিতা সবনম বলেন, ‘প্রতিদিন ৪০-৬০ জন শিক্ষার্থী জ্বর নিয়ে আসছেন। যাদের মধ্যে ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি। আক্রান্তের সংখ্যা একশ’র বেশি।’
ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ আছে কি জানতে চাইলে সবনম বলেন, ‘এখানে প্যাথলজিস্ট নেই। তাই রক্ত পরীক্ষার কোনও সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও প্যাথলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’
কিছুদিন পূর্বে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অমিত কুমার বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে পারলে অন্তত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা কম হতো।’
শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ অনাবাসিক হওয়ায় পুরান ঢাকায় ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থাকতে হয় জবি শিক্ষার্থীদের। পুরান ঢাকায় অপরিচ্ছন্নতা ও জলাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গুর আতঙ্কে রয়েছে জবির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রতিসন্ধ্যায় মশা নিধনে স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ স্থান অপরিচ্ছন্ন ও বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
হল না থাকায় বাড়তি খরচ করে বাসাবাড়িতে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের, তারপরও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ২০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এছাড়াও ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে দ্বিমুখী সংকটে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। শিক্ষার্থীরা বলছে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল সেন্টার থাকলে চিকিৎসা খরচ কম হতো তাদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়েও মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার করা হয় না ড্রেনগুলো। পানি জমে থাকে প্রায় ড্রেনেই। সব থেকে নোংরা অবস্থা ইউটিলিটি ভবনের দুই গেটের ড্রেন। এমনকি জবিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্যটিতেও সবসময় জমে থাকে পরিষ্কার পানি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পরও পানি অপসারণের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নতুন ভবনের বেজমেন্ট এলাকা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলাভবনের মসজিদের সামনে বসানো হয়েছে ডাস্টবিন। অথচ আবর্জনা ডাস্টবিনের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। নতুন ভবনের বেজমেন্টে সারাবছরই পানি জমে থাকে। বেজমেন্টে ডেঙ্গুর ভয়ে মোটরসাইকেল-গাড়ি রাখে না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারেও মিলছে না ডেঙ্গুর কোনও সেবা। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও রক্ত পরীক্ষার সুযোগও করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ।
রাজু আহমেদ বলেন, ‘সারাদিনই ক্যাম্পাসে থাকা হয়, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গা অপরিচ্ছন্ন, প্রায় জায়গায় পরিষ্কার পানি জমে থাকে। ক্যাম্পাস থেকেই আক্রান্ত হয়েছি বলে মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও কোনও যোগাযোগ বা সহয়তা পাইনি এখন পর্যন্ত। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে সব পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে আইন বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সরকার আলী আককাস বলেন, ‘আমরা কিছুদিন পরও পরীক্ষা নিতে পারবো। কিন্তু, পরীক্ষা নিতে গিয়ে কারও ক্ষতি হয়ে গেলে কী করবো।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘জবিতে কোনও মেডিক্যাল সেন্টার নেই, যেটা আছে সেটা প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। কারও ভর্তি করার প্রয়োজন হলে আমরা ন্যাশনাল মেডিক্যালে প্রেফার করি। আজকেও যারা আমার কাছে এসেছিল, তাদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি।’

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছে ২৯ প্রতিষ্ঠান
‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছে ২৯ প্রতিষ্ঠান
মানবিক সমাজ বিনির্মাণে তরুণদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে: স্পিকার
মানবিক সমাজ বিনির্মাণে তরুণদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে: স্পিকার
দিল্লির রেকর্ড রানের জবাবে লড়াই করে হারলো মুম্বাই
দিল্লির রেকর্ড রানের জবাবে লড়াই করে হারলো মুম্বাই
মোরসালিনের ফেরার ম্যাচে ব্রাজিলিয়ানের জোড়ায় জিতলো কিংস
মোরসালিনের ফেরার ম্যাচে ব্রাজিলিয়ানের জোড়ায় জিতলো কিংস
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: এখনও অপেক্ষায় স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: এখনও অপেক্ষায় স্বজনরা