কারোনাভাইরাসের মহামারিকালে ব্যতিক্রমী একটি ঈদ উপভোগ করছে মুসলিম বিশ্ব। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। উৎসবপ্রেমী মানুষকে এবারের ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে অনেকটা ঘরোয়াভাবে। ঈদগাহে বা খোলা ময়দানে অনুমতি না থাকলেও মসজিদগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। তবে সেই আয়োজন ছিল অনেকটাই অনাড়ম্বর। এবারের ঈদে জাতীয় ঈদগাহে ছিল না পরিচিত সেই মহামিলন।
সোমবার (২৫ মে) সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর ঐতিহ্যবাহী ও প্রধান ঈদ জামাতের এই ময়দানটির প্রধান গেট ছিল বন্ধ। মাঠজুড়ে গজিয়েছে লম্বা লম্বা সবুজ ঘাস। সেখানে ছিল না চিরচেনা আয়োজন বিশাল শামিয়ানা। ছিল না মুসল্লিদের পদচারণা কিংবা কোলাহল। ঈদগাহের মেহরাবটিও ছিল ময়লা-আবর্জনায় ভরা। মাঠঘেঁষা ফুটপাত দিয়ে যারাই যাচ্ছিলেন, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন ঈদগাহের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাবের দিকে। খালি পড়ে থাকা ঈদগাহ যেন অতীতের স্মৃতিই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সকাল ৯টার দিকে জাতীয় ঈদগাহের লাগোয়া সড়কের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আব্দুল হামিদ মিয়া। বারবার মিনারের দিকে তাকাচ্ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘ জীবনে কখনও এমন ঈদ আসেনি। ঈদের দিনে জাতীয় ঈদগাহ’র এমন অনাড়ম্বর পরিবেশও কোনোদিন দেখেননি। ঐতিহ্যবাহী এই ঈদগাহটি এভাবে পড়ে থাকবে সেটা কখনও কল্পনা করেননি তিনি।
ঈদগাহের ছবি তুলতে এসেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক গোলাম আরিফ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ছবিগুলো ইতিহাস হয়ে থাকবে। কারণ, আমার জানামতে কখনও জাতীয় ঈদগাহ এমন থাকেনি। তবে শুনেছি, ঝড়ের কারণে এক-দুইবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। সবসময়ই এখানে ঈদ জামাতের আয়োজন ছিল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি একেবারেই ভিন্ন।’
জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন হাইকোর্ট মাজার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। জামাত শেষে মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। অন্যান্য বছর যেখানে নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই শুরু হয়ে যেতো কোলাকুলি, সেখানে এ বছর কার থেকে কে কত দূরত্বে থাকতে পারেন, সবার ভেতরে যেন সেই ভাবনাই কাজ করছে। এমনকি স্বজনদের সঙ্গেও কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি।
দুই ছেলে ও ছোট ভাইসহ ঈদের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু নাছের। প্রতিবছরই তিনি জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন। আবু নাছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবনে এবারের ঈদ ইতিহাস হয়ে থাকবে। অন্যান্য বছর সবাই মিলে যেখানে ঈদগাহে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতাম, সেখানে এ বছর কেউ কারও সঙ্গে কোলাকুলিও করতে পারছি না। নিকটাত্মীয়দের সঙ্গেও মেলামেশা হচ্ছে না। জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এভাবে অব্যবহৃত থাকবে কখনও কল্পনাও করিনি। সব মিলিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই রমজান ও ঈদের উছিলায় মহামারি করোনাকে বিদায় করেন।’
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবছর আমরাই জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সব আয়োজন করে থাকি। এই ময়দানে লক্ষাধিক নারী-পুরুষ একসঙ্গে জামাত আদায় করতো। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়নি।’
ছবি: শাহেদ শফিক