X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দেশের রিসোর্টগুলো

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৬ জুলাই ২০২০, ২৩:৫১আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২০, ১৫:৩৬





পাখির চোখে দেশের একটি রিসোর্ট

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের রিসোর্টগুলো। অনেকে নানান অফার দিচ্ছেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অতিথিদের আশায় ব্যবসায়ীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা মানুষ ঈদের ছুটিতে বেড়াবেন, সেই আশায় বুক বেঁধে আছেন রিসোর্ট মালিকরা। যদিও এখনই পর্যটন গন্তব্য ও হোটেল-রিসোর্ট উন্মুক্ত হওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড।
জানা গেছে, সারা দেশে ২০০টির বেশি রিসোর্ট রয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে এগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সরকারের সাধারণ ছুটি শেষে কিছু রিসোর্ট জুন থেকে খুলতে শুরু করেছে। তবে কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় সেখানকার জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ রয়েছে।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে কীভাবে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ পরিচালিত হতে পারে সেজন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড। ইতোমধ্যে এর খসড়া অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।
রিসোর্ট মালিকরা বলছেন, সরকারের গাইডলাইন হাতে না পেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন তারা। কর্মীদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রিসোর্টে প্রবেশের সময় অতিথিদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন তারা। প্রবেশপথ জীবাণুমুক্ত রাখা হচ্ছে। রিসোর্টের কর্মী ও অতিথিদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এছাড়া সর্বত্র রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
অতিথিদের প্রবেশের আগেই কক্ষ জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। রিসোর্টের রেস্তোরাঁয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রয়েছে নতুন আসন বিন্যাস। একই পরিবারের সদস্য ছাড়া এক টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হবে না। অতিথিদের চলাচলের পথ কোনও কোনও ক্ষেত্রে একমুখী করা হয়েছে।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রিয়াব)-এর সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‌‌‌সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়সীমা শেষ হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রিসোর্টগুলো চালু হচ্ছে। সবাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছেন। অতিথিরা রিসোর্টে এলে যেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ট্রিয়াব সভাপতির কথায়, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরে ছিল। এখন তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশার কথা হলো, প্রায় সব রিসোর্টই শহরের বাইরে। নির্মল পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে পারলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক পরিবর্তন হবে।’
জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে অনেক রিসোর্ট চালু হলেও অতিথি তেমন একটা নেই বলে দাবি করেন খবির উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও জানান, জুলাই থেকে কিছু লোকজন আসতে শুরু করেছে। রিসোর্টগুলোর সক্ষমতার ৫-১০ শতাংশ অতিথি এখন দেখা যাচ্ছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঈদের আগে খুলছে না। তাই সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ, হোটেল-মোটেলসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গত ১১ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়।
সাগরকন্যা কুয়াকাটায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সব ঋতুতে পর্যটকরা বেড়াতে যান। সেখানে রয়েছে অনেক রিসোর্ট। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় ১৫ জুনের পর থেকে সীমিত পরিসরে এগুলো চালু হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক হোটেল ও রিসোর্ট যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ কারণে ইতোমধ্যে ১১টি হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবসময় খেয়াল রাখছি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা। যেসব হোটেল-রিসোর্ট স্বাস্থ্যবিধি মানবে না সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মানেনি বলে বন্ধ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে।’
দেশের সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট গাজীপুরে। জেলাটির সুকুন্দি গ্রামে ৫০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে ছুটি রিসোর্ট। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘেঁষে গ্রামীণ আবহে অবকাশযাপনের জন্য জনপ্রিয় এটি। রিসোর্টটি ফের চালু হয়েছে ২৪ জুলাই। গ্রামীণ পরিবেশে বাঁশের কটেজ, মাছ ধরা, খেলার মাঠ, রেস্তোঁরা, সুইমিংপুল ও কনফারেন্স রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে এতে।
ছুটি রিসোর্টে ৫০টি কক্ষ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য এখন আগের মতো সবক’টিতে অতিথিদের রাখা হচ্ছে না। এখানে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে বলে জানান রিসোর্টটির হেড অব মার্কেটিং আবুল হোসেন আবির। তিনি বলেন, ‘একটি কটেজে ১০টি কক্ষ থাকলেও পাশাপাশি আর অতিথিদের রাখা হবে না। অন্তত একটি কক্ষ ফাঁকা রেখে পরের ‍কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমাদের কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কারণে আয় কমবে এবং খরচ বেড়েছে বলে মনে করেন ছুটি রিসোর্টের এই কর্মকর্তা। এতদিন বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকই করতে হয়েছে। এখন তারা অতিথিদের সাড়া পেতে শুরু করেছেন আবারও। কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন। তার দাবি, ‘বিগত বছরগুলোতে ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সব রুম বুক হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই অনুকূল পরিস্থিতি নেই।’
গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা রিসোর্টের চেয়ারম্যান ইমারত হোসেন উল্লেখ করেন, করোনার কারণে তাদের অবস্থা খুব নাজুক। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় রিসোর্ট চালু করেছেন তিনি। এখন ভ্রমণপ্রেমীরা যোগাযোগ করছেন। তার মতে, স্বাভাবিক পরিস্থিতি না থাকায় রিসোর্ট পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই অতিথিদের সেবা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
যদিও এখনই পর্যটন গন্তব্য ও হোটেল-রিসোর্ট উন্মুক্ত হওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ জানান, শিগগিরই পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থান ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষের ভিড় হতে পারে এমন স্থানগুলো এখনই উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে আমরা নই। যেখানে মানুষের ভিড় কম সেখান থেকে ধীরে ধীরে সব চালু হলে ঝুঁকি কম থাকবে।’

/জেএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে: আব্বাস
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে: আব্বাস
টেন মিনিট স্কুলে বিকাশ পেমেন্টে ক্যাশব্যাক
টেন মিনিট স্কুলে বিকাশ পেমেন্টে ক্যাশব্যাক
চিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর প্রতি অবহেলা সহ্য করা হবে না
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিচিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর প্রতি অবহেলা সহ্য করা হবে না
নিখোঁজের দুই দিন পর মেঘনায় মিললো যুবকের মরদেহ
নিখোঁজের দুই দিন পর মেঘনায় মিললো যুবকের মরদেহ
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে