X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ফুটপাতে সেলাই করে মাসে আয় ৫০ হাজার

আতিক হাসান শুভ
০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২৩আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২৬

আওলাদ হোসেন, বয়স সত্তরের কাছাকাছি। দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও হিসাবটা মোটামুটি এমনই। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে তিনি জানালেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরের বছরই তিনি মেট্রিক পাস করেছিলেন। ‘সেই আমলের শিক্ষিত’ হলেও পড়াশোনাটা আর এগোয়নি, নিজের ‘গাফিলতি’তে হারিয়েছেন চাকরির সুযোগও। তবে এতে আক্ষেপ করেন না বৃদ্ধ আওলাদ। দেশে যেখানে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা অসংখ্য শিক্ষিত যুবক বেকার, যেখানে তিনি এই বয়সেও মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।

রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পাশেই ফুটপাতে বসেই সেলাইয়ের কাজ করেন আওলাদ হোসেন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আশির দশকে মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তরুণ বয়সের আওলাদ। সেসময়ের স্মৃতি আওড়ে তিনি বলেন, আমি ১৯৭২ সালে মেট্রিক পাস করি। তখনতো চাকরির কথা চিন্তাও করিনি, হেসে-খেলে সময় পার করেছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমাকে তার মাশুল দিতে হয়েছে। আশির দশকে দর্জির কাজ করতে ঢাকায় এসেছিলাম। সেই থেকে এখনও ঢাকাতেই আছি। মাঝে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। সুবিধা করতে না পেরে আবার ফিরে এসেছি।

দীর্ঘ এই কয়েক দশকে নিজের চোখে ঢাকা শহরের অভাবনীয় পরিবর্তন দেখেছেন আওলাদ হোসেন। তার কথায়, এই শহরের আমুল পরিবর্তনের সাক্ষী আমি। একসময় যেখানে ঝোপঝাড় ছিল, সেখানে এখন বিশাল বিশাল অট্টালিকা। আশির দশকে যখন আমি ঢাকায় আসি তখন চারপাশে অনেক খালি জায়গা আর ডোবা ছিল। গাছপালা আর বনজঙ্গলে ঢেকে ছিল অনেক জায়গা। কিন্তু সেই পরিবেশ আর নেই। ঢাকা শহর এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে।

করোনা মহামারিতে কাজ করতে পারেননি। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কেটেছে তার। তবে করোনার প্রকোপ কমে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসায় আবার উপার্জন হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো সময় কাটছে। মানুষ ফুটপাত থেকে জামা কাপড় বা প্যান্ট কিনে আমার কাছে সাইজ ঠিক করতে নিয়ে আসে।

শহর আধুনিক হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনের খরচও বেড়েছে। মুদ্রার মূল্যও কমেছে। আওলাদ হোসেনের ভাষ্য, একসময় আমি দুই টাকা দরের দর্জি ছিলাম। মানুষ এক টাকা, দুই টাকা দিয়ে আমার কাছে কাপড় সেলাই করতো। এখন খরচ বেড়েছে, মজুরিও বেড়েছে। প্যান্ট প্রতি ৮০ টাকা, টি-শার্টের জন্য ৫০ টাকা এবং শার্ট বা পাঞ্জাবী (তৈরি কাপড়) নতুন করে সেলাইয়ের জন্য ১০০ টাকা করে নেই। সেখান থেকে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সেই হিসাবে ছুটির দিন বাদেও মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশিই আয় হয়। তবে ফুটপাতে বসায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার মতো ‘এদিকে-সেদিকে’ দেওয়া লাগে। টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ করেই’ এখানে বসতে হয়। তবে এই ‘এদিক-সেদিক’ নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাইলেন না আওলাদ হোসেন।

ঢাকায় শিক্ষিত অনেক তরুণের চেয়ে তার উপার্জন বেশি- এমন মন্তব্য করলে স্মিত হেসে আওলাদ বলেন, ‘বেকার না থেকে সততার সঙ্গে যে কোনও কাজ মনযোগ দিয়ে করলে উপার্জন হয়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। সেখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে ফিরে আসি। ঢাকায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
জামায়াত কর্মী পরিচয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ, পুলিশ বলছে ‘অভিযোগ নেই’
জামায়াত কর্মী পরিচয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ, পুলিশ বলছে ‘অভিযোগ নেই’
গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির মীমাংসা করতে বসে উল্টো সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির মীমাংসা করতে বসে উল্টো সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার