রাজধানীর শ্যামলীর একটি হাসপাতালের এনআইসিইউ থেকে বের করে দেওয়া ছয় মাস বয়সী শিশু আব্দুল্লাহ ১৭ দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) আব্দুল্লাহকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিলিজ দেয়। র্যাবের সহায়তায় তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরু থেকেই র্যাব পরিবারটির সঙ্গে ছিল।
গত ৬ জানুয়ারি শ্যামলীর ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ এনআইসিইউ থেকে ছয় মাস বয়সী যমজ শিশু আহমেদুল্লাহ ও আব্দুল্লাহকে বের করে দেয়। অসহায় পরিবারটির অনুরোধও রাখেনি তারা। এতে মারা যায় আহমেদুল্লাহ। পরে আব্দুল্লাহকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হলে র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে ঢামেক হাসপাতালে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
৭ জানুয়ারি র্যাবের অভিযানে আমার বাংলাদেশ হাসাপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে (৫৭) গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায়, আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের রোগী ভর্তির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। দালালের মাধ্যমে গত ২ জানুয়ারি শিশু দুটিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয় পরিবারটিকে। তা না হলে চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
দরিদ্র পরিবারটি চার দিনে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধও করে। আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যমজ দুই সন্তানসহ ভুক্তভোগীদের বের করে দেওয়া হয়। তখন আহমেদুল্লাহর মৃত্যু ঘটে।
পরে র্যাবের সহায়তায় আরেক শিশু আব্দুল্লাহকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার এবং র্যাবের সার্বিক সহায়তায় শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে।
শিশুটি বাড়ির পথে রওনা করছে। এ সময় র্যাব ৩-এর কর্মকর্তারা শিশুটির পরিবারের হাতে উপহারও তুলে দেন।
আব্দুল্লাহর মা আয়েশা বেগম জানান, ‘ঠান্ডাজনিত কারণে ৩১ ডিসেম্বর তাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে এনআইসিইউতে সিট পাচ্ছিলাম না। পরে এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের পরামর্শে পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই।’
শ্যামলীর ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ দিন ভর্তি দেখিয়ে ওই পরিবারের কাছে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করে। এরমধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিলেও কর্তৃপক্ষ মানছিল না।’
শিশুদের মা আয়েশা বলেন, ‘তাদের হাতে-পা ধরেও লাভ হয়নি। ৬ জানুয়ারি বিকালে তারা আমাদের বের করে দেয়।’ সেখান থেকে ঢামেকে আনার আগেই এক শিশুর মৃত্যু হয়।
সোমবার ঢামেক থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর র্যাব ৩-এর কর্মকর্তারা আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় র্যাবের এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
আয়েশা র্যাবের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানান।