X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে ছিনতাই, মামলা নিতে অনীহা পুলিশের

নুরুজ্জামান লাবু
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩:৫৪আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:২০

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। কখনও হাঁটা পথে, কখনোবা বাসের জানালা দিয়ে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের জিনিসপত্র। এছাড়া সাধারণ মানুষ রিকশায় যাতায়াতের সময় মোটরসাইকেল থেকে ছোঁ মেরে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও জিনিসপত্রসহ ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। কিন্তু পুলিশের খাতায় এসব ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ছিনতাই বা দস্যুতার মামলা পুলিশ নিতে চায় না। ছিনতাই বা দস্যুতা মামলার সংখ্যা বেশি হলে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ধরা হয় বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের জিডি করতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সব ধরনের মামলা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে ছিনতাই ঠেকাতে রাতে টহল বৃদ্ধি করতে বলেছেন তিনি। রাতের টহলে কেউ গাফিলতি করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

ডিএমপি’র উপ-কমিশনার ফারুক হোসেনের দাবি, ‘ছিনতাই বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। কেউ মামলা করতে গিয়ে ফেরত এলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনও ঘটনায় ভুক্তভোগীরা যাতে থানায় গিয়ে আইনি সহযোগিতা পান সে বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমীর কুমার নামে এক ব্যক্তি চলতি পথে জুম মিটিংয়ের সময় মোটরসাইকেলে চড়ে ছিনতাইকারীরা ছোঁ মেরে তার আইফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এর আগে গত মাসের শেষ সপ্তাহে ধানমন্ডি এলাকায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরানের মোবাইল ফোন একইভাবে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। গত মাসের শুরুর দিকে আসাদ গেট এলাকায় সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ হালিমের মেয়ে ঈহা অবাপ্তি রিকশায় করে ফেরার পথে তার মোবাইলফোনসহ ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। চলন্ত অবস্থায় ব্যাগ টান দেওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মোশারফ হোসেন (৪৫) নামে একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিহত হন। এর আগের দিন কদমতলীর বউবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে রাকিব হাওলদার (২২) নামে এক তরুণের ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোবাইল ফোন ও দেড় হাজার টাকা নিয়ে যায়।

এসব ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারা এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে জনি দাস (২২) নামে একজন দোকান কর্মচারী আহত হন। গত ১৬ জানুয়ারি বাংলামোটর এলাকায় ছিনতাইকারীরা পিস্তল ঠেকিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর প্রায় একসপ্তাহ পর (২২ জানুয়ারি) হানিফ ফ্লাইওভারে একজন মাছ বিক্রেতা ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। ২৩ জানুয়ারি গণমাধ্যমকর্মী ফিরোজ আহমেদ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এছাড়া গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আসাদ গেট ফুটওভার ব্রিজে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন আব্দুর রব নামের একজন।

শুধু সাধারণ নাগরিকরাই নয়, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন খোদ পুলিশ সদস্যরা। গত ১৫ ডিসেম্বর পল্লবী এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ মূলব্যান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। গত মাসে বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসে উঠে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে প্রাণ হারান আরেক পুলিশ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি রাজধানীসহ এর আশেপাশের এলাকায় ছিনতাইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ছিনতাই ঘটছে অহরহ।  এছাড়া ব্যস্ত সড়কে টানা পার্টির সদস্যরা প্রায়ই যাত্রীদের হাত থেকে মোবাইল ফোন ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন এলাকার ফাঁকা রাস্তা, গভীর রাতে প্রাইভেটকারযোগে বিভিন্ন প্রধান সড়ক এবং ভোরের দিকে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে বেশি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়লেও গত মাসে রাজধানীর ৫০টি থানায় মাত্র ৫টি ছিনতাই বা দস্যুতার মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১২টি, ২০২০ সালে গড়ে প্রতি মাসে ১৪টি, ২০১৯ সালে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১৩টি এবং ২০১৮ ও ২০১৭ সালে গড়ে প্রতি মাসে ১৮টি করে ছিনতাই বা দস্যুতার মামলা হয়েছে। ছিনতাই বাড়লেও ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর মামলার সংখ্যা কমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোন ও অল্প পরিমাণ টাকা ছিনতাই হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা থানায় যেতে চান না। যারা থানায় গিয়ে অভিযোগ বা মামলা করতে যান, তাদের হারানো জিডি করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। খোদ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মামলা হলে আদালতে যাওয়ার ঝক্কি পোহাতে হবে বলে হয়রানির ভয় দেখান ভুক্তভোগীদের।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় একাধিক মোটরসাইকেল পার্টি ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেল পার্টির ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসছে। কিন্তু মোটরসাইকেল পার্টির সদস্যরা কোনও ধরনের অস্ত্র বহন করে না বা সাধারণ যাত্রীদের মতো চলাফেরা করার কারণে আগে থেকেই তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে তারা বেশ কয়েকটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছেন, তাদের ধরতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তার দৃষ্টিতে, ‘রাজধানীতে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ছিনতাই বেড়েছে। এছাড়া ছিনতাইকারীদের ধরে কারাগারে পাঠানো হলেও কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আবারও আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছে। এসব কারণে ছিনতাই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও ছিনতাইকারীদের ঠেকাতে গোয়েন্দারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।’

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
প্রতিদিন খোয়া যাচ্ছে সহস্রাধিক মোবাইল, উদ্ধারে আগ্রহ কম পুলিশের
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সর্বশেষ খবর
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
বেসিস নির্বাচন২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা