গত ১৭ মার্চ ট্রেনে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মাহবুব আদর। তার লাশ পাকশি হর্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করতে গিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের লোহার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মৃত্যুবরণ করেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে বুধবার (২৩ মার্চ) তার সহপাঠীরা এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে দ্রুত বিচার চেয়েছেন।
আজ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘মাহবুব আদরের নৃসংশ হত্যাকাণ্ড ও খুনিদের বিচার দাবি’ শীর্ষক মানববন্ধনে তারা এ কথা বলেন।
আদরের বন্ধু মার্কেটিং বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ‘১৫ মার্চ মাহবুব কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নেয়। সে লালন শাহের মাজারে যাবে। রাতে সে ট্রেন থেকে পোস্ট দেয়, অপরিচিত বন্ধুর সঙ্গে আছি। পরের দিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সে যদি ব্রিজে আঘাত পেয়ে মারা যাবে, তাহলে তার মাথার পেছনে কেন আঘাত হবে। সময় গড়াচ্ছে, আমরা এতে ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি। তার বাবা সম্ভ্রান্ত রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে ষড়যন্ত্র থেকে এটি হতে পারে।’
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মাহবুব তার মায়ের সঙ্গে রাত ১২টায় কথা বলে। কিন্তু এর পর তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাইনি। সকালে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। পরে তার ফোন চেক করে দেখা যায়, সে ফেসবুকে রাত ৩টায় পোস্ট করেছে। অথচ ছবিটি তোলা হয়েছিল রাত একটায়। রেলের সিসিটিভি চেক করে দেখা যায়, ট্রেনটি পাকশি ব্রিজ অতিক্রম করে রাত আড়াইটায়। অথচ পরের দিন তার লাশ উদ্ধার করা হয় ব্রিজের কাছ থেকে। পুলিশও বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাহলে কেন হত্যাকারীরকে এখনও খুঁজে বের করা হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাহবুবের বাবা একজন মেয়র পদপ্রার্থী। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। ঝামেলা আছে। যদি এর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা না হয় তাহলে এ আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হবে। আমাদের প্রশাসনের কোনও হস্তক্ষেপ আমরা দেখছি না। তাহলে কেন আমরা এখানে পড়বো?’
মাহবুবের বান্ধবী ঢাবি শিক্ষার্থী শ্রাবণী বলেন, ‘ইতোমধ্যে এক সপ্তাহ চলে গেছে, কিন্তু এখনও প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডের কোনও কারণ বের করতে পারেনি। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা মাহবুব হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণে চার দফা লিখিত দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: তদন্তের দায়িত্বভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর হাতে তুলে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হবে। বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে খুনির দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।