ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাই চক্রের ৪১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, চাঁদাবাজ চক্র রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ী হতে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তারা জীবননাশের হুমকি প্রদর্শন করে।
এছাড়া ঈদের কেনাকাটার জন্য বের হওয়া সাধারণ মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতো একটি ছিনতাই চক্রের সদস্যরা।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগ, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, মুগদা, শাহবাগ, মতিঝিল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ৩৩ জন চাঁদাবাজ ও আট জন ছিনতাকারী।
এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত নগদ ১ লাখ ২ হাজার ৫৩৩ টাকা, ৫৩টি মোবাইল, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৯টি সুইচ গিয়ার, ১০টি এন্টিকাটার, ১০টি ক্ষুর, সাতটি চাকু, দু’টি চাইনিজ কুড়াল, চারটি রামদা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সোলাইমান (২৫), নুর হোসেন (৩০), মো. শাহজালাল (২২), আলী হোসেন (৪০), আরিফ হোসেন (১৭), সাইফুল ইসলাম (৫৭), মাসুম (২৭), মো. শিবলু (২৫), মোক্তার হোসেন (৩০), মো. মুন্না (২০), মো. সাইমন (৩২), মো. রনি (২৫), মো. আব্দুল মান্নান (৪৪), মো. বাবুল হাওলাদার (৫০), মো. আবুল কাশেম (৪৫), নুরুল হক (৪০), মো. রাকিব খান (২০), মো. মাসুদ (৪০), মো. জনি (৩২), মো. আকাশ (২০), মো. নাইম (১৯) ও মাজাহারুল ইসলাম ওরফে তামিম (১৮)।
এছাড়াও গ্রেফতার হয়েছে- মো. রাকিব (১৯), মো. নাইম বেপারী (১৯), মো. সজীব (২৫), বাবুল হোসেন (৩২), ইসমাঈল (৩৫), মো. রবিন (২৮), মো. সেলিম (৪০), মো. ইয়াসিন আরাফাত (২২), মো. নুর হোসেন (৬৫), মহব্বত হোসেন (৪০), মো. লিটন (৪২), মো. আরিফ (২৫), সাব্বির হোসেন জুবায়ের (২০), হেমায়েত হোসেন মামুন (৩৮), মো. ফারুক (৫০), শাহ পরান (২৬), কামরুল হাসান (২৫), মো. মিজান (২৪) ও মো. সেলিম (৩৬)।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য তুলে ধরে আরিফ উদ্দিন বলেন, চাঁদাবাজ চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং পরে পণ্যবাহী গাড়ী থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছে। ফুটপাতের দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে। এই কাজে চার থেকে পাঁচ জনের একটি গ্রুপ জড়িত।
এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলেই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। ইফতারের সময় এবং সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, লেবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ ও বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
