সাত মাস আগে আজহারুল ইসলামের সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন ইমা। কিন্তু বিয়ের পর মানসিকভাবে ইমার কন্যাশিশু নামিরাকে মেনে নিতে পারেনি তার সৎ বাবা। ইমা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঘরে মা না থাকলে মেয়েকে প্রায়ই মারধর করতো আজহারুল। বৃহস্পতিবার (১২ মে) মারধরের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে নামিরা। প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে ও পরে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শুক্রবার (১৩ মে) ভোররাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তিন বছরের শিশু নামিরা ফারিজ।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজহারুল বলেছে, বিয়ের পর নামিরাকে সে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। সে কারণেই মারধর করতো।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, আজহারুলের বিরুদ্ধে প্রথমে মামলা করতে চাননি ইমা। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে বলা হলে মামলা দায়ের করেন তিনি।
ইমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজহারুল আমাকে বলেছিল মেয়েকে সে শাসন করেছে। এত ছোট মেয়ে। আমিও চাচ্ছিলাম না কোনও কাটাছেঁড়া করা হোক। পরে বুঝতে পারলাম মারধরের কারণেই মেয়েটা মারা গেছে। এটা স্পষ্ট যে সে এর জন্য দায়ী। আমি তার শাস্তি চাই।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজহারুল ইসলাম জানিয়েছে, সাত মাস আগে তার সঙ্গে ইমার বিয়ে হয়। আগে থেকেই পরিচয় ছিল তাদের।
ইমা তার অফিসে গেলে প্রায়ই শিশুটির ওপর নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতো আজহারুল। বৃহস্পতিবার যখন মেয়েটি ভাত খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিল, তখন মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে খাটের কোনায় লেগে মাথায় আঘাত পায় নামিরা। এরপর তার নাক দিয়েও রক্ত পড়া শুরু হয়। ইমা বাসায় এসে মেয়ের অবস্থা দেখে প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজহারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নামিরার মা ইমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। আমার সবই শেষ। প্রথমে মামলা করতে রাজি হইনি। পরে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করেছি। আমার আর কিছু বলার নেই।’
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজহারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে আর কোনও কারণ আছে কিনা তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে সে জানিয়েছে ইমার কন্যাকে সে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।’
নামিরার বাবা ইমার প্রথম স্বামী নাঈম ব্যবসা করেন উত্তরাতেই। মেয়ে মারা যাওয়ার খবর শুনে ছুটে যান ঢামেক হাসপাতালে। পরে ময়নাতদন্তের পর তিনি ও মেয়ের মা দুজনে নামিরার মরদেহ নিয়ে যান।
বাংলা ট্রিবিউনকে নাঈম বলেন, ‘মেয়েকে তো হারিয়েছি। তবে একটা কথাই বলবো যে এ ঘটনার জন্য দায়ী তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। মেয়েকে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দিয়ে এসেছি।’