X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

চোরাই মোবাইলের ‘বড় সুবিধাভোগী’ অসাধু ব্যবসায়ীরা

রিয়াদ তালুকদার
০২ জুন ২০২২, ০৫:৪৮আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ০৫:৫২

ছিনতাই কিংবা চুরি করা মোবাইলের দাম যতোই হোক, এর মাত্র ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকাই পায় ছিনতাইকারী কিংবা চোররা। বাকি ‘লাভের’ বড় অংশই ভোগ করেন তাদের সরাসরি ক্রেতা কিছু ভ্রাম্যমাণ অসাধু ব্যবসায়ী ও টেকনিশিয়ানরা। মূলত এই ব্যবসায়ী ও টেকনিশিয়ানরা কৌশলে মোবাইলের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি বা আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে বাজারের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি করেন ব্যবহারকারীদের কাছে। আর একারণে চোরাই মোবাইল সহজে শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না।

কিছুদিন আগে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে সর্বস্ব হারিয়ে হাসপাতালে থাকা এক ব্যক্তির ঘটনা ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি মোবাইল ছিনতাই বা টানা পার্টির সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাজধানীর শাহবাগে, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী এলাকার অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল ছিনতাই ও চোর চক্রের ১৮ সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার (৩১ মে) ভোরে চালানো অভিযানে উদ্ধার করা হয় সাতটি ট্যাব, স্মার্ট ফোন টাচ মোবাইল ২৪২টি ও ২৪টি বাটন ফোন।

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে, তারা মোবাইল ছিনতাই ও চুরির সাথে জড়িত। মোবাইল ছিনতাই এবং চুরির পর তারা গুলিস্থান, মতিঝিল, কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কম দামে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতো। সেসব ব্যবসায়ীরা নিম্নআয়ের মানুষের কাছে কম দামে স্মার্টফোন বিক্রি করতো। যেকোনও ফোনে হোক না কেন স্মার্ট কিংবা বাটন ফোন ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করে দিতে তারা।

র‌্যাব জানিয়েছে, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট থাকে পথচারীরা। আর ‘টানা পার্টি’ বিভিন্ন বাসে জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলার সময় সুযোগ বুঝে মোবাইল টান দিয়ে চম্পট হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, চুরি হওয়া মোবাইলগুলো তিনটি হাত বদল হয়। প্রথমত যে চুরি করে সে কোনও চোরাইফোন ক্রেতা (ব্যবসায়ী) বা মোবাইল টেকনিশিয়ানের কাছে বিক্রি করে দেয়। চোরাই ফোনের সেই ক্রেতা বা টেকনিশিয়ান ফোনে লক বা ‘ফাইন্ড ইউর ফোন’ অপশনটি চালু থাকলে তার ডিসপ্লে ও কেসিং উচ্চমূল্যে বিক্রি করে থাকেন। আর এসব অপশন চালু না থাকলে আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয় তারা। 

গ্রেফতার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের কয়েকজন

র‌্যাব বলছে, ছিনতাইকারী কিংবা চোর ফোনের জন্য সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পেলেও আইএমআই পরিবর্তন করা এসব ফোন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের পর চক্রটি মূলত বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করে থাকে এসব চোরাই মোবাইল। আর আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরবর্তী সময়ে উদ্ধার করাও সম্ভব হয় না।

ছিনতাইকারীরা মূলত কম মূল্যে মোবাইল বিক্রি করে তা দিয়ে মাদক কেনে। রাজধানীতে মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়েই অহরহ মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। হাত ঘুরে এসব মোবাইল পরে বিক্রি হয় নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিতে বসবাসকারীদের কাছে। ছিনতাইয়ের কারণে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে চক্রের সদস্যরা। কম সময়ে বেশি উপার্জনের আশায় মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে, আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। কিছুদিন পর তারা আবার জামিনে বের হয়ে একই ধরনের ছিনতাই-চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত আমরা এসব বিষয়ে মনিটরিংয়ে রাখছি। যখনই কোথাও কোনোধরনের চুরি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। 

রাস্তাঘাটে চলার পথে ছিনতাই কিংবা কোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি। তা না হলে অনেক বিষয় আমাদের কাছে অজানা থেকে যায়। এতে করে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’ চোরাই মোবাইল বিক্রি সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

র‌্যাব-৩ এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ সুপার বীনা রানী দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি বেশকিছু অভিযানে মোবাইল চুরি এবং ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক ছিনতাইকারীকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। চলতি পথে রিকশা কিংবা পাবলিক পরিবহনে কথা বলার সময় মোবাইল ফোনের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী চক্রগুলো সুকৌশলে নানা সিন্ডিকেটের যোগসাজশে এসব চোরাই মোবাইল বিক্রি করে আসছে উল্লেখ করে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব চক্রের সদস্যরা রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে লোকজনদের সাথে থাকা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা আমাদের নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন, মুচলেকায় ছাড়া পেলেন সাবেক এমপি পুত্র
সর্বশেষ খবর
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫