X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পে আবারও সংশোধনী

শফিকুল ইসলাম
৩০ জুন ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ০৯:০০

আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া ‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পটি তৃতীয় বারের মতো সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের অনুমোদনও মিলেছে। শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মঙ্গলবার (২৮ জুন) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, মোট ১১টি কারণ দেখিয়ে তৃতীয় বারের মতো প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে একনেকে উপস্থাপন করা হয়। কারণগুলো হচ্ছে- ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বাড়ানো, দরপত্র সংক্রান্ত মামলা, নেত্রকোনা জেলায় চিফ জুডিশিয়াল আদালত ভবন নির্মাণ বাদ দেওয়া, পাহাড়ি এলাকার জন্য স্বতন্ত্র নকশা, ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ বাদ দেওয়া, এজলাসের সংখ্যা বাড়ানো, গ্যারেজ নির্মাণ, গ্লাস পার্টিশন স্থাপন অন্তর্ভুক্তি, অতিরিক্ত ৩০ হাজার গ্যালন ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ, রাস্তা ও সীমানা প্রাচীরের ব্যয় বাড়ানো, একটি নতুন জিপ গাড়ি ক্রয়ের সংস্থান এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো।

জানা গেছে, আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া  ‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আইন ও বিচার বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদফতর। চূড়ান্ত অনুমোদনে প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২৬০ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটির শুরুতে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭১৩ কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে এর ব্যয় বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৭০ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির ২য় সংশোধিত এর ব্যয় আরও বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এরপর আবারও বিশেষ সংশোধিত আকারে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হয়। সেবার প্রকল্পটির ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২ হাজার ৪৬৪ কোটি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৩য় সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পটির ব্যয় কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২৬০ কোটি ৩৪ লাখ ২৬  হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০০৯ সালে শুরু হয়ে তা ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যয় না বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২য় সংশোধিত প্রস্তাব মোতাবেক প্রকল্পটি ২০১৮ সালে, পরে আবার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়। তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইন বিচার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাফতরিক স্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য সেবার মান উন্নত করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দাফতরিক সুবিধাদি বৃদ্ধি ও সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতেই দেশের ৪১টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৪৩ দশমিক ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে ৫ লাখ ৫ হাজার বর্গমিটার ভবন নির্মাণ করা হবে। ১২ হাজার ৪১৫ দশমিক ৭৮ রানিং মিটার ড্রেন ও এপ্রোন, ১৩ হাজার ৪৩০ দশমিক ৪১ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর ও গেট নির্মাণ, ৮৭ হাজার ২০ দশমিক ৫০ বর্গমিটার কম্পাউন্ড রোড, কার পার্কিং ও কালভার্ট নির্মাণ, ২ লাখ ৫২ হাজার ঘনমিটার সাইট উন্নয়ন ১২৬টি প্যাসেঞ্জার লিফট কেনা হবে। একইসঙ্গে ৪১টি সাব-স্টেশন (৪০০ থেকে ৬৩০ কেভিএ), ৪১টি জেনারেটর (১০০ থেকে ১৫০ কেভিএ), ৪১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কেনা হবে। ৭৯৫টি এজলাস ও কাঠগড়া স্থাপন করা হবে। ৫০৪টি এজলাসের গ্লাস পার্টিশন স্থাপন এবং তিনটি গাড়ি কেনাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের আরএডিপিতে ২০৫ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মপরিবেশ সমুন্নত হবে, যা বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা ১৬ এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

একনেকে উপস্থাপনের আগে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাফতরিক স্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য প্রদত্ত সেবার মান উন্নত করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দাফতরিক সুবিধাদি বাড়াবে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এসব কারণেই আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) (৩য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ২,২৬০ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একনেক-এ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাফতরিক স্থান বাড়বে, এর মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য সেবার মান উন্নত হবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দাফতরিক সুবিধাদি বাড়বে ও সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

/এমআর/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…