X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘জিতু দাদা’ নামে গ্যাং গড়ে তোলে শিক্ষক ‘হত্যাকারী’ জিতু

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ জুন ২০২২, ১৪:৩৩আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৭:৫১

ঢাকার আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করা দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু এলাকায় ‘জিতু দাদা’ নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘জিতু তার নেতৃত্বে এলাকায় “জিতু দাদা” নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করতো সে। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারি গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।’

জিতুকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন উৎপল কুমার সরকার। সেই হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধুমপান, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন। স্কুলের এক ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। এই ঘোরাফেরা থেকে জিতুকে বিরত থাকতে বলেন শিক্ষক উৎপল। এই ঘটনায় জিতু ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোয়িজম প্রদর্শন করতে শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ২৫ জুন স্কুলে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে জিতু। এর ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক উৎপল মারা যান।’

ঘটনার পরপরই জিতু পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপণ করে। পরে বুধবার (২৯ জুন) র‌্যাব সদর দফতরে গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, শিক্ষক উৎপলকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে জিতু এবং পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন উৎপল মারা যান।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় অবস্থান করলেও পরে এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে বাসে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপণ করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চে আরিচাঘাট পৌঁছায়। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে যায়। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।’

গ্রেফতার জিতুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদ্রাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু ওই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত সে। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করতো জিতু। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করতো সে।’

জিতুর জেএসসির সার্টিফিটেট অনুযায়ী তার বছর ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধুমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করতেন। এছাড়া, তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।’

জিতুর বাবাকে গ্রেফতারের পর তার রিমান্ডে নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করেছেন, তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। তাই জিতুর বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন। আমরা জিতুকে গ্রেফতারের আগে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। র‌্যাব প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করে সবসময়। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রকৃত আসামি জিতুকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছি।’

জিতুর পরিরিবার কর্তৃক উৎপলের পরিবারকে হুমকি-ধামকির বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা উৎপলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এমন কোনও হুমকি-ধামকির বিষয়ে তথ্য পাইনি।’

/এআরআর/আইএ/
সম্পর্কিত
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছরআজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
সোমবার দুই ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সাভারে ভাঙারির দোকানে আগুন, এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা