X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবালদ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় জরিমানা, আদায়ের খবর নেই

এমরান হোসাইন শেখ
২৩ অক্টোবর ২০২২, ২৩:৫১আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:৪৯

পরিবেশ দূষণের দায়ে সেন্টমার্টিনের ৮০টি হোটেল-রিসোর্টকে জরিমানা করলেও তা আদায় করতে পারেনি পরিবেশ অধিদফতর। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেড় বছর আগে এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ করে মোট ৪ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হলেও তারা তা দেয়নি। অবশ্য পরিবেশ অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা কিছু জরিমানা আদায় করেছেন, বাকিটা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতর স্থানীয়ভাবে সেন্টমার্টিনের আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্টের তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের তথ্য মতে, সেখানে বর্তমানে ১৬৬টি রিসোর্ট বা আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি রয়েছে নির্মাণাধীন। আবার কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে বা আগে রিসোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন আবাসিক বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া সেখানে ৬২টি খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতর থেকে গত বছর এখানকার হোটেল-রিসোর্টগুলোকে প্রথমে নোটিশ দেওয়া হয়। পরে গত বছর ২ জুন প্লাস্টিক, সাধারণ ও পয়োঃবর্জ্যের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের দায়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপ করা হয়।

সম্প্রতি এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রদান করা হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮০টি হোটেল-রিসোর্টের কোনওটিই জরিমানার অর্থ দেয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।

সেন্টমার্টিনে আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট বা রেস্টুরেন্টগুলোর কোনও পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত এই দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদফতর। জানা গেছে, সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশের ছাড়পত্রের আবেদন করেছে। তবে ইসিএ-র শর্তানুসারে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ না থাকায় সেগুলো ঝুলে আছে।

এদিকে পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকা ঘোষণার পাশাপাশি এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকাকে সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এলাকা ঘোষণা করা হয়। বৈশ্বিকভাবে হুমকির সম্মুখীন প্রবাল, গোলাপী ডলফিন, হাঙর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি ১৪) অর্জনের লক্ষ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশের ওই এলাকাকে ঘিরে মেরিন প্রটেক্টেড ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণে একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই নীতিমালায় রাত্রিযাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০০ জন পর্যটক যাতায়াতের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটক প্রতি ১ হাজার টাকা করে ভ্রমণ চার্জ আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। অবশ্য স্থানীয় জনগণ ও পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এর বিরোধিতা করে আসছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার জেলার পরিচালক ফরিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের তালিকা তৈরি করেছি। পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকা হিসেবে সেখানে এ ধরনের স্থাপনা তৈরির কোনও সুযোগ নেই। তারা ঘরবাড়ি বা অন্য কাজের কথা বলে টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে এগুলো তৈরি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনটিরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। তাদের কেউ কেউ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। তবে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় এটা দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সরকার যদি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনও করণীয় নেই।

জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জরিমানা দিয়েছে, বাকিরা দেয়নি। যেগুলো জরিমানা দেয়নি, সেগুলো ভেঙে দিতে হবে, তবে এটা বড় কাজ। এর সঙ্গে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন।

চলতি মাসের ২৯ তারিখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কক্সবাজারে আসছেন উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সচিব মহোদয় সেন্টমার্টিনের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় অংশীজনের সাথে আলোচনা করবেন। সেখানে সার্বিক বিষয় উঠে আসবে।’ ওইসময় সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের নীতিমালা নিয়েও আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূর আহমেদ বলেন, ‘তাদের সেখানে দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এগুলো সরকারের নীতিমালা মেনে গড়ে ওঠেনি ঠিক। কিন্তু তারা পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করছেন।’ সেন্টমার্টিনে নির্দিষ্টসংখ্যক পর্যটকের যাত্রা বা রাত্রীযাপন না করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান। পর্যটনের স্বার্থে সরকার এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা সেন্টমার্টিনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ইত্যাদি পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নোটিশ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর যাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে তা আদায় করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকায় স্থাপনা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পেছনে কারা রয়েছে সেটা আমরা জানতে চেয়েছি। আমরা এই বিষয়টি সামনে আনতে চাই। এ বিষয়ে আমরা সামনে অগ্রসর হবো।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সেন্টমার্টিনে স্পিডবোট-ডুবি, ১৯ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার
সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা
পর্যটকবাহী দুই জাহাজকে জরিমানা
সর্বশেষ খবর
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!