চিকিৎসক সংকটে রয়েছে দেশের কারা হাসপাতালগুলো। বর্তমানে ৮৬০ জন কারাবন্দির বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। এই সংকট দূর করতে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর উদ্যোগ নিলেও সেটা কার্যকর হয়নি। উচ্চ আদালত থেকেও একাধিকবার এ সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সব কারাগারে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য গত ১৫ নভেম্বর সর্বশেষ উচ্চ আদালত থেকে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, কাজ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক নিয়োগের জন্য পৃথক মেডিক্যাল ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি রয়েছে ৮০ হাজারেরও বেশি বন্দি। আর তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ৯৩ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ গড়ে ৮৬০ জন বন্দির বিপরীতে সেবা দিচ্ছেন একজন চিকিৎসক। কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৪১টি। এর বিপরীতে অধিদফতরের নিজস্ব চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪ জন। অর্থাৎ ১৩৭টি পদই এখনও শূন্য রয়েছে। যদিও সিভিল সার্জন অফিস থেকে কারাগারগুলোতে বর্তমানে ৮৯ জন চিকিৎসক সংযুক্ত আছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক মেডিক্যাল ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য প্রকল্প তৈরি ও নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করতেও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে দিতে উপসচিব (প্রশাসন-৩) ও কারা অধিদফতরের আইজি প্রিজন্সকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কারাগারগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। এজন্য ‘অ্যাম্বুলেন্স, নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারা অধিদফতরের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ৬৮টি অ্যাম্বুলেন্সের সংস্থান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত কাজ শেষ করারও তাগিদ দেওয়া হয়।
কারাবন্দিদের চিকিৎসা দিতে আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কারাগারে চিকিৎসকদের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৫ নভেম্বর এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
কারা অধিদফতরের ডিআইজি প্রিজন্স (সদর দফতর) সুরাইয়া আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কারা অধিদফতরের নিজস্ব চিকিৎসক রয়েছেন বর্তমানে চার জন। সংকট মেটাতে সিভিল সার্জন অফিস থেকে সারা দেশের কারাগারগুলোতে সাময়িকভাবে সংযুক্ত আছেন আরও ৮৯ জন চিকিৎসক। তিনি বলেন, এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা কারাবন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকেন। কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার পরও উন্নত চিকিৎসার জন্য বন্দিদের বাইরের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়। কারাগারগুলোর তত্ত্বাবধানেই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।