X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

শুরু হলো দুই দিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০২আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৩১

করোনাকাল পেরিয়ে প্রায় তিন বছর পর মঞ্চে ফিরল বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। ৩৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবে সম্মাননা দেওয়া হয় গুণীজনকে। তারা হলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় উৎসবে গুণী এই দুই শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক ও অর্থমূল্য তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংবর্ধিত দুই গুণীর শংসাবচন পাঠ করেন সাগরিকা জামালী ও সীমা সরকার।

সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, ‘জগতের বিপুল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। আমি আজ তার নামাঙ্কিত সম্মাননা পেলাম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা থেকে। এ সম্মাননাটি আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের।’

রফিকুল আলম তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত এ সম্মাননা আমার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।’

সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শব্দসৈনিককে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া।

সম্মিলিত কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা

‘এই জীবনের ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত-’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয়বাণী ধারণ করে দুই দিনের সংগীত উৎসবের সূচনা হয়েছে। এদিন রবীন্দ্রনাথের গানের সুরে সুরে সংস্কৃতির লড়াইকে বেগবান করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দুই দিনের উৎসব ভাগ করা হয়েছে তিন অধিবেশনে। উদ্বোধনী দিনেই ছিল দুটি অধিবেশন। সকাল ১০টায় প্রথম অধিবেশনে ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথমেই দেওয়া হয় গুণীজন সম্মাননা।

উদ্বোধনী অধিবেশনে (সকালে) দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত পাঁচটি দলের সমবেত পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় সংগীত ভবন, উত্তরায়ণ, সুরতীর্থ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী (বাফা) ও বিশ্ববীণা।

রবীন্দ্রনাথের পূজা-প্রেম পর্যায়ের গানের পাশাপাশি বৈচিত্র্য পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো এই পর্বটি দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করে। এই পর্বের শুরুতেই মঞ্চে আসেন সংগীতভবনের শিল্পীরা। তারা পরপর গেয়ে শোনালেন ‘লহো লহো তুলে লহো নীরব বীণাখানি’ ও ‘হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী/ পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি’। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন উত্তরায়ণের শিল্পীরা। তারাও গেয়ে শোনান দুটি গান- ‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ ও ‘প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে/ভয়-ভাবনার বাধা টুটেছে’।

সুরতীর্থের শিল্পীর গাইলেন ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে’ ও ‘কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা’। বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর (বাফা)  শিল্পীরা শোনান ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’ ও ‘এখন আর দেরি নয়, ধর্ গো তোরা হাতে হাতে ধর্ গো’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি হয় বিশ্ববীণা শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। তারা শোনান ‘হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-’ ও ‘একি মায়া,/ লুকাও কায়া/ জীর্ণ শীতের সাজে’।

উৎসবে সম্মাননা জানানো হয় বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও সঙ্গীতশিল্পী মো. রফিকুল আলমকে

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম পরপর গেয়ে শোনান ‘উত্তর বায় জানায় শাসন/ পাতলো তপের শুষ্ক আসন’ ও ‘ওই জানালার কাছে বসে আছে/ করতলে রাখি মাথা—’ শিরোনামে দুটি গান। তার আগে সংবর্ধিত বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’-এর কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন।

অগ্রহায়ণের মিষ্টি সকালে মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উৎসবের সূচনা হয় সংগঠনের রীতি অনুযায়ী জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। এরপর সংস্থা শিল্পীরা দুটি কোরাস পরিবেশন করেন। গান দুটি ছিল ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ ও ‘তোমার  সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে’।

মাঝখানে বিরতি দিয়ে বিকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে অংশ নেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্পী। প্রথম দিনের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, বুলা মাহমুদ, তানজিমা তমা, অনিকেত আচার্য, সাগরিকা জামালী, বিষ্ণু মণ্ডল, কনক খান, সীমা সরকার আবদুর রশীদ, রিফাত জামাল মিতু, খোকন দাস, আজিজুর রহমান তুহিন, শর্মিলা চক্রবর্তী আহমেদ শাকিল হাশমী, সাজ্জাদ হোসেন, জাফর আহমেদ, রাবিতা সাবাহ, ছন্দা রায়, নির্ঝর চৌধুরী সহ আরও অনেকে।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৬ নভেম্বর (শনিবার) একই মঞ্চে বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। উৎসবের সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০ জন শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, ড. অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলাম সহ বেশ কয়েক জন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী।

দুই দিনের অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন বাকশিল্পী আশরাফুল আলম, জয়ন্ত রায়, বেলায়েত হেসেন মাহমুদা আখতার ও রেজিওয়ালী লীনা।

৩৩তম (ত্রয়োত্রিংশ) উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে যে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতজন মারা গেছেন, তাদের স্মৃতির উদ্দেশে। অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

আরও পড়ুন:
সম্মাননা পাচ্ছেন আশরাফুল আলম ও রফিকুল আলম

/এমআরএস/এমএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেলো পাকিস্তান
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেলো পাকিস্তান
মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড
মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি