X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অচল অবস্থায় রয়েছে’  

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩৪আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩৪

‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন অচল অবস্থায় রয়েছে। এদিকে তহবিলের প্রবাহ আগের চেয়ে আরও নাজুক। তাই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বিকাশে কৌশলগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে।’ বুধবার (৩০ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণ: আমাদের কি কৌশলগত পরিবর্তন দরকার?’ শীর্ষক নীতি সংলাপে এসব পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

ব্র্যাক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ যৌথভাবে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে এই সংলাপের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের শুরু থেকে, সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলো বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আফগানিস্তানে মানবিক সংকট এবং চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মতো আরও বেশ কয়েকটি বিষয় এখন বড় বৈশ্বিক উদ্বেগ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মানবিক সহায়তার প্রবাহকেও সংকুচিত করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের গবেষণালব্ধ চারটি গবেষণাপত্র এই সংলাপে উপস্থাপন করা হয়, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিবর্তিত চাহিদা, ২০২৩ ও তার পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সম্ভাব্য জীবিকার মাধ্যম এবং এসব মোকাবিলায় স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীজনের ভূমিকা এবং এসব ইস্যুর পাশাপাশি অর্থের নতুন উৎসের অনুসন্ধান করেছে।

গবেষণাপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বক্তারা হোস্ট কমিউনিটির চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, হোস্টদের নিরাপত্তাহীনতা দূর করা হলে, তা হোস্ট-রোহিঙ্গা সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে। এভাবেই প্রশস্ত হবে কৌশলগত প্রক্রিয়া নির্ধারণের পথ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এ মান্নান বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। রোহিঙ্গারা এখানে আসার পর শুরু থেকে যেসব সমস্যা ছিল, এখন বাস্তবে সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রাসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও অর্থায়ন দরকার।’

তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এটা সত্য যে, আমাদের দেশে অনেক সমস্যা থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে (রোহিঙ্গাদের) আশ্রয় দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও শুরু থেকে আমাদের সমর্থন দিয়েছে। এখন তাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত ইস্যুতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত সমীক্ষায় মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য গবেষকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ গেলো পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘যা স্পষ্ট তা হলো যে, জনসংখ্যা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং হোস্ট সম্প্রদায় এবং শরণার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সংহতির গতিশীলতাও পরিবর্তিত হচ্ছে। এসব বিবেচনা করে,আমাদের শরণার্থীদের জন্য একটি মধ্য-মেয়াদি কৌশল সন্ধান করা উচিত। কারণ, আমরা তাদের স্বদেশে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য ক্রমাগত সমর্থন করছি। একটি ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, বর্তমান কাজগুলো স্বল্পমেয়াদি মানবিক সংকটকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উন্নয়ন পদ্ধতির দিকে সরানো দরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একমাত্র সমাধান মিয়ানমারে তাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস (অনলাইনে), ইউএনএইচসিআর অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সু-জিন রি এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন পরিচালক ক্যাথরিন ডেভিস স্টিভেনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মাকসুদ কামাল, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সু-জিন রি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘস্থায়ী সংকটে আছি। জাতিসংঘের সংস্থা হিসেবে এই বিষয়টিকে কৌশলগতভাবে দেখতে হবে আমাদের। ষষ্ঠ বছরে এসে তহবিল হ্রাস পাচ্ছে। এই মুহূর্তে সুরক্ষা, স্বাস্থ্য,  পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও খাবারের মতো ন্যূনতম চাহিদাগুলোকে কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা দেখতে হবে। আমাদের সহনশীলতা, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমাজের উৎপাদনশীল অংশ হয়ে ওঠে।’

ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন পরিচালক ক্যাথরিন ডেভিস স্টিভেনস বলেন, ‘আমাদের বাজারভিত্তিক সমাধানের ওপর ফোকাস করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতে ফিরে যেতে পারে। একই সময়ে আমাদের হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা ও অন্যান্য চাহিদার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। আজ আমি রোহিঙ্গাদের জীবিকা, শিক্ষার সুযোগ, নিরাপত্তা, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সুযোগের ওপর জোর দিতে চাই। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমাদের মোট ১.৯ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে। রোহিঙ্গা সংকটে ইউএসএআইডির সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’

কানাডা হাই কমিশনের রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্সের হেড অব কোঅপারেশন বিবেক প্রকাশ বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখছি। কানাডা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এগুলোর মাঝে প্রধান হলো এলপিজি গ্যাস সহায়তা। রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটির ভেতর সামাজিক সংহতি টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে হোস্ট কমিউনিটি নিজেদের পিছিয়ে পড়া বলে মনে না করে। ভুলে গেলে চলবে না যে, এটি বাংলাদেশের একটি মানবিক সংকট। যেহেতু রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ সীমিত, তাই এর আর্থিক তাৎপর্য বেশি।’

সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গবেষণা ও এর প্রভাবকে সর্বজনীন করে তুলতে এতে কোনোভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতামত তুলে ধরতে পারলে আরও ভালো হতো।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা