বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার ও ব্যবহার ‘ঝড়ের গতিতে বাড়ছে’ উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তামাকবিরোধীরা। এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তামাকবিরোধী কর্মী, তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অপপ্রচার ও কৌশলী ভূমিকার কারণে অনেক তরুণ-তরুণী জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর নতুন এই তামাক পণ্যের প্রতি আসক্ত হচ্ছে। ফলে টিন, নিকেল, ক্যাডিয়াম, লেড, মার্কারিসহ বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান সম্বলিত ই-সিগারেট বাংলাদেশে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে দেশে ক্যানসার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে ভয়াবহভাবে।
শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ই-সিগারেটের আসক্তি ও স্বাস্থ্যক্ষতি: জনস্বাস্থ্য রক্ষায় উপায়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্ক-আইপিএন এবং ইনিশিয়েটিভ ফর পাবলিক হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইপিএইচআরসি) যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচকরা মনে করেন, এমতবস্থায় যথাযথ আইনের অনুপস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে ই-সিগারেট দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য সর্বনাশা হয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে টিসিআরসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারহানা জামান লিজা বলেন, বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যাপক আকারে বিস্তৃত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর ই-সিগারেটের লাগাম টেনে ধরার জন্য সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিদ্যমান বিভিন্ন আইন ও বিধি-বিধানের মাধ্যমে ই-সিগারেটের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানান এই তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন কূটকৌশলের কারণে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার ও বাজার জ্যামিতিক হারে বিস্তৃত হচ্ছে। ই-সিগারেটের প্রসারের জন্য নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং ওটিটি প্লাটফর্মের মাধ্যমেও কৌশলী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও ই-সিগারেটের প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
আলোচকরা ফারহানা জামান লিজার বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে ই-সিগারেটকে এখনই নিষিদ্ধ করতে হবে।
টিসিআরসির সভাপতি ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপির সভাপতিত্বে এবং টিসিআরসির সদস্য সচিব ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগি অধ্যাপক মো. বজলুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ট্যোবাকো পলিসি নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ড. রোমানা হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েসেন্স-এর পাবলিক হেলথ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসাইন, একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি এবং আইপিএইচআরসির নির্বাহী পরিচালক সুশান্ত সিনহা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও আইপিএন এর নির্বাহী পরিচালক এহসানুল হক জসীম। অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েসেন্স-এর শিক্ষক পলাশ চন্দ্র ভৌমিক, আইপিএনের পরিচালক কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী শাকিল, নাটাবের খলিল উল্লাহ, সিএলপিএ ট্রাস্টের কামরুন্নিসা মুন্না প্রমুখ।