আন্তনগর ট্রেনগুলোকে যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে বিভিন্ন কমিউটারসহ লোকাল ট্রেনকে যত্রতত্র স্টপেজ করানো হয়। রাতে কিংবা দিনে স্টেশন ছাড়া বিভিন্ন নির্জন স্থানে এসব ট্রেন ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে। ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকে, জানালা খোলা থাকে, অনেক যাত্রী ট্রেন থেকে নিচে নামে। এই সুযোগে ছিনতাইকরীরা যাত্রীদের মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে পালিয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাতে টঙ্গী এলাকায় ঘটে এমন এক ঘটনা। ট্রেন থামানোর পর ছিনতাইকারীরা মোবাইল নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে তারা তেড়ে এসে ট্রেনে অনবরত ঢিল ছোড়া শুরু করে। এতে সাধার যাত্রীরা ভয় পেয়ে যায়।
রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গীর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে টঙ্গী স্টেশনের আউটারে অন্য একটি ট্রেনকে আগে যেতে দেওয়ার জন্য দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনকে। আশপাশে অন্ধকার থাকায় হঠাৎ এক ছিনতাইকারী এসে জানালার পাশ থেকে এক যাত্রীর মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ট্রেন থেকে নেমে প্রতিবাদ করলে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে থাকা আরও সদস্যরা এসে ট্রেন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া শুরু করে। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এ সময় আহত হন দুজন যাত্রী ও রেলের একজন কর্মচারী। পরে ট্রিপল নাইনে ফোন দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
রেলওয়ে পুলিশ বলছে, কমিউটার কিংবা লোকাল ট্রেনগুলোয় পুলিশ পাহারা না থাকার কারণে স্টেশন ছাড়া অন্য কোথাও ট্রেন স্টপেজ করানো হলে সেখানে নিরাপত্তার ঘাটতি থেকে যায়। শুধু আন্তনগর ট্রেনগুলোয় পুলিশি পাহারা থাকে। জনবল-সংকটের কারণে আন্তনগর ট্রেনগুলো ছাড়া অন্য কোনও ট্রেনে রেলওয়ে পুলিশ থাকে না।
সূত্র জানায়, রেলের ২ হাজার ৯৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে অরক্ষিত ৭০০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৯৭টি স্পট ভয়ংকর হিসেবে চিহ্নিত। যেখানে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ডাকাতি, ঢিল ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, দাঁড়ানো অবস্থায় ট্রেনে ছিনতাই ও ঢিল ছোড়ার ঘটনায় রাজধানীর টঙ্গী এলাকার আশপাশ থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চাপাতি, সুইজ গিয়ার, গুলতি উদ্ধার করা হয়। ছিনতাই করা মোবাইলও উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটার পর ছিনতাইকারীরা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পায় তারা। শীল মুন, মরকুন ও কেরানি টেক বস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মাহবুব রহমান জানান, যখন এক্সপ্রেস ট্রেন যায়, তখন মেইল ট্রেনগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থামানো হয় এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে আগে যেতে দেওয়ার জন্য। যখন এসব মেইল ট্রেন বিভিন্ন জায়গায় থামে, তখন অনেক যাত্রী ট্রেন থেকে নিচে নামেন। এই সুযোগটাই ছিনতাইকারীরা নিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, এতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনাটা বড় আকার ধারণ করে। এখানে অপরাধী সংখ্যা বেশি ছিল।
তিনি বলেন, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার আশপাশে বস্তি এলাকা। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১১ জন জড়িত থাকতে পারে। আমরা ৯ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রেনে ছিনতাই কিংবা ঢিল ছোড়ার মতো ঘটনা কমাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ২৭০টি বৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক অবৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে জেলা পুলিশের ৬১২ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। রেললাইনের আশপাশে যেসব এলাকা রয়েছে, সেসব এলাকায় আমরা বিভিন্ন সময় সচেতনতামূলক কর্মসূচি করে থাকি। জনসাধারণকে বোঝানোর চেষ্টা করি কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে। যেকোনও অনিয়মের তথ্য পেলেই যেন আমাদের জানায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, দাঁড়ানো অবস্থায় কোনও ট্রেনে ছিনতাই হলে যদি যাত্রীরা প্রতিরোধ করতে যায়, তখন আশপাশের অন্য সদস্যরা এসে ট্রেন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া শুরু করে। এতে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লোকবল স্বল্পতা স্বীকার করে তিনি বলেন, লোকবল স্বল্পতা রয়েছে। তবে আন্তনগর ট্রেনগুলোয় পোশাকধারী পুলিশ থাকে। তবে আমি মনে করি সব ধরনের ট্রেনে পুলিশ দিতে পারলে ভালো হতো। ট্রেনগুলো যেন রেলস্টেশনে থামে, তাহলে আমাদের কাজও আরও সহজ হয়। আমরা চেষ্টা করছি রেল যাত্রীদের যাত্রাপথ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে।