X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতি

আইনজীবীর খরচের টাকা রেখেই ৪৮ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে ডাকাতরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:০১আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:২৪

রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কাওলা এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‍্যাব পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় দেশের সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গত ১০ অক্টোবর এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ডিবি বলছে, ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আসছিল। এমনকি ডাকাতি শেষে গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলতো তারা। এই চক্রটি গত ১০ অক্টোবর বিকালে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, কেউ স্ত্রীর গহনা কিনেছে, কেউ আবার জুয়া খেলেছে।

গ্রেফতাররা হলো- সবুজ মিয়া ওরফে  শ্যামল (৩৯), সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার দিদার মুন্সী (৩৫), ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), আলামিন দুয়ারী দিপু (৪২) ও দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)।  এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র‍্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির টাকায় কেনা স্বর্ণালংকার এবং ছিনিয়ে নেওয়া ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ডিবি। 

রবিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সোহেল আহম্মেদ সুলতান নামের এক ব্যবসায়ীর দেওয়া দুটি চেকের মাধ্যমে উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক থেকে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা। ব্যাংক থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবসায়ী পার্টনার জাফর ইকবালের প্রতিনিধি রাজনকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের একটি গাড়িতে করে বনানীতে যাত্রা করে।

গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল দিয়ে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপর বিকাল ৪টার দিকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেট কার এসে কোম্পানির গাড়িটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। গাড়ি থেকে কালো রঙের র‍্যাবের জ্যাকেট পরিহিত ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি র‍্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়িটি থামায়।

গ্রেফতার ডাকাত দলের সাত সদস্য

র‍্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা গাড়িতে থাকা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহানকে বলে গাড়িতে অস্ত্র আছে— এমন অভিযোগে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাংক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়ি চালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩শ’ ফিট এলাকায় ফেলে চলে যায়। এই ঘটনায় সোহেল আহম্মেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্ত শুরু করে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতি জড়িত দলটিকে শনাক্ত করা হয়।

তদন্তে দেখা যায়, সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি করা দলটি কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। এর কৌশল হিসেবে ডাকাতি ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করে। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।

সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা

গ্রেফতার ডাকাত দলের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি মহানগর প্রধান বলেন, এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে ধরা পড়লে আইনজীবীদের ফি দেওয়ার জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, কেউ স্ত্রীর গহনা কিনেছে, কেউ আবার জুয়া খেলেছে। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। 

ডাকাত দলটিতে বাহিনীর কোনও সদস্য জড়িত কিনা জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা আগে বিভিন্ন ডাকাত দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাবেক সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও এই দলে এমন কেউ নেই। তবে দলটিতে একজন মহুরিকে পাওয়া গেছে। সাগর নামের ওই ব্যক্তি অনার্স-মাস্টার্স পাস করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করতো। সে ডাকাত দলের একজনকে জামিন করাতে গিয়ে ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এরপর মহুরি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের হয়ে কাজ করতো। তার দায়িত্ব হলে বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা। তারা পেশাদার ডাকাত।’

এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে।

/কেএইচ/ইউএস/
সম্পর্কিত
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বশেষ খবর
লোহিত সাগরে এন্ড্রোমিডা স্টার জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
লোহিত সাগরে এন্ড্রোমিডা স্টার জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!