মেয়ে ও ছেলেদের সমান অধিকার এবং সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে ভারতের আহমেদাবাদে ৫০ জন শিশুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনিসেফ ও আইসিসির মধ্যে বৈশ্বিক অংশীদারত্বের আওতায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘ক্রিকেট ক্লিনিক’ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী মোট ১০ দলের প্রত্যেকে একটি করে ক্রিকেট ক্লিনিক বা সেশনে অংশগ্রহণ করে। শনিবার (৪ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় ইউনিসেফ।
ইউনিসেফ জানায়, ইংল্যান্ডের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সেশনটির মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত ১০ পর্বের এই ক্রিকেট ক্লিনিক শেষ হয়। আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেট দল ১০ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ জন শিশুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, ধর্মশালা, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই, নয়াদিল্লি ও পুনের স্টেডিয়ামে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব ক্রিকেট সেশনে খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের, বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয় প্রতিটি দল। ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেন, ‘ক্রিকেট লাখ লাখ মানুষকে আন্দোলিত করতে। মেয়ে ও ছেলেদের অনুপ্রাণিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলে উভয়ের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কাজে লাগানো একটি সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ হবে বলে আমরা মনে করি। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী মেয়েদের জন্য জীবন সবসময় সহজ নয়। বিশ্বজুড়ে যত কিশোরী রয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশ বাস করে এই অঞ্চলে। তবে তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। প্রতিটি মেয়ের জন্য এই ক্রিকেট সেশন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরি করবে, যা তাদের সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ইউনিসেফ জানায়, এই ক্রিকেট সেশনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন এর মাধ্যমে অল্পবয়সী মেয়ে ও ছেলেরা বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা শেখার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে। তাদের মাঝে মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব তৈরি হয়। তারা নেতা হয়ে গড়ে ওঠার গুণাবলি অর্জন করতে পারে।
গত ১৩ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সঙ্গে ক্রিকেট সেশনে যোগ দেওয়ার পর শিশু প্রিয়াঙ্কা বলে, ‘আমরা পুরো দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি। সবাই খুব আন্তরিক ছিল। আমরা ধরে নিয়েছিলাম তারা বেশ কঠোর হবে। সব মিলিয়ে এটি একটি দারুণ অনুভূতি ছিল।’
শবনম বলে, ‘আজ এখানে উপস্থিত থাকা এবং দলটির সঙ্গে দেখা হওয়া আমার জন্য দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। তারা আমাদের খেলার জন্য সঠিক পজিশন এবং কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। আমি এটি উপভোগ করেছি।’
শিশুদের উদ্দেশে আফগানিস্তানের বোলার নাভিন উল হক বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হও, ক্রিকেট খেলো। তুমি ছেলে না মেয়ে সেটি কোনও বিষয় নয়।’
১৮ অক্টোবর ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে তারকা উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বে পাকিস্তান দল ৫০ জন শিশুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলে।
গত ১৯ অক্টোবর বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করে শিশুরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন দলটির সঙ্গে শিশুরা প্রীতি ম্যাচ খেলে। ক্রিকেটের পাশাপাশি দল গঠন ও নেতৃত্বের মতো জীবনের পাঠ শেখে।
তারা ক্রিকেটারদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। ক্রিকেটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের উত্তর দেয়। তাদের কাছ থেকে টি-শার্ট এবং ক্যাপে অটোগ্রাফ নেয় শিশুরা। ইউনিসেফ অস্ট্রেলিয়ার দূত প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থেকে বাঁচতে এবং সফল হতে কী লাগে সে সম্পর্কে একটি উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনায়ও অংশ নেয় শিশুরা।
২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্রিকেটে বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং নিয়ে শিশুদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়।
সংক্ষিপ্ত অনুশীলন সেশনের পরে স্নেহা মণ্ডল বলে, ‘ছেলেদের সঙ্গে খেলতে পেরে ভালো লেগেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেকে ছেলেদের সমান মনে হয়েছে।’
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু শুভম রাজওয়ার দোভাষীর সাহায্য নিয়ে জানায়, ম্যাচ চলাকালে একটি দলে কীভাবে খেলতে হয় তা শিখতে এই অনুশীলনটি উপকারী ছিল। সে বলে, ‘আমি আমার দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল শিখেছি।’
২৮ অক্টোবর পুনের বিভিন্ন স্কুলের ৫০ জন শিশু পুনের গাহুঞ্জে এমসিএ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের সঙ্গে একটি ম্যাচ খেলে।
৩১ অক্টোবর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বাইয়ের ভারত স্কাউটস ও গাইডের প্রায় ৫০ জন শিশুর সঙ্গে দেখা করে ভারতীয় ক্রিকেট দল।
