নারীর অধিকার আদায়ে সর্বজনীন পারিবারিক আইনের নতুন খসড়া তৈরি অথবা আগের খসড়া আধুনিকরণ করে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারীর অধিকার’ বিষয়ক সেমিনারে এ আহ্বান জানান বক্তারা।
নারী প্রগতি সংঘ নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের পরিচালক সাহনাজ সুমি। আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।
আলোচনায় সার্বজনীন পারিবারিক আইনের নতুন খসড়া তৈরি অথবা আগের খসড়া আপডেট করে আইন প্রণয়নের আহবান জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমির। তিনি বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন ও সর্বজনীন বিষয়টি আমাদের সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। সংবিধানের মূল যে দলিল- সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার; বর্তমানে আমাদের পারিবারিক প্রথায় এগুলোসহ সংবিধানও লঙ্ঘন হচ্ছে। আমাদের উচিত এগুলো প্রতিরোধ করা এবং সার্বজনীন পারিবারিক আইনের নতুন খসড়া তৈরি অথবা আগের খসড়া আপডেট করে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নানামাত্রিক যুদ্ধ-সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বিশ্বজুড়েই আরো বেগবান হয়েছে, যা সমগ্র নারীসমাজকেই আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে। এটি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার এবং উৎপাদনশীলতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, যা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে সহিংসতা প্রতিরোধ করা দরকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগ গ্রহণে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
শ্যামল দত্ত বলেন, নির্বাচনের সময় যেকোনও ঘটনা ঘটলে এর প্রথম ভিকটিম হবে নারী। অথচ আমরা নারীদের উন্নয়নে কতটা অগ্রগামী? ভারতের হিন্দু নারীদের অধিকার দিয়ে আইন পাশ হলো, অথচ বাংলাদেশে? আমাদের ধর্মীয় নেতারাই এটা হতে দেয় না। আমাদের দেশে নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামটি অনেক দীর্ঘ এবং আগামীতেও তা অনেক দূর। তবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। নারীরা এখনও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে পড়ার চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সব ক্ষেত্রে শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি মেনে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারহীনতাই পরিবারে ও সমাজে নারীকে অধস্তন করে রাখে, যা বাল্যবিয়েসহ নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতার অন্তর্নিহিত মূল কারণ। সে কারণে সংস্থা উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। একই কারণে পরিবারের ভেতরে গণতান্ত্রিক এবং সমাজ-রাষ্ট্রে ইহজাগতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায়ও বিএনপিএস সোচ্চার।
এসময় তিনি নারীর অধিকার আদায়ে পরিবার থেকে রাষ্ট্র, উভয়কেই ইনস্টিটিউট হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। সেমিনারে এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীদের অধিকার আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।