X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যাকাণ্ডকে যেভাবে সাজানো হয় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৩আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৩

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বলছে, বিষয়টি সাজানো। ডাকাতির নাটক সাজিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে গুলি করে মোহাম্মদ হোসেনকে হত্যা করা হয়। পরে ঘটনাটিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে একটি চক্র। পরে তারাই  সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালায় ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে থাকে।

আসলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ঘের দখল ও আন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ এতে জড়িত ১৪ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী শহিদুল ইসলাম লিটন (৪৫), আবু জাফর (৫০),  মো. সোহেল (৩৭), আজগর আলী (৪৫), আবুল হোসেন পাখী (৩৫), নাজমুল হোসাইন রকি (২৭), আবদুর রহিম (৪৮)। সহযোগীরা হলেন- জয়নাল আবেদীন (৫৫), মো. শাহিন (২৩),  মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন (৪৪),  প্রদীপ কুমার শীল (৪৮), মো. রিদুয়ান (৩১), আবদুল হক (৫৫), মো. কাইছার (৩৫)।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি)  দুপুরে কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রামপুরা চিংড়ি ঘের এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীর গুলিতে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক চিংড়ি ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনায় ভিকটিমের ছেলে গত ১২ জানুয়ারি বাদী হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  মামলার সূত্র ধরে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে র‌্যাবকে তথ্য দিয়েছে দাবি করে খন্দকার আল মঈন বলেন,  চকরিয়ায় ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি’র সভাপতি হিসেবে গ্রেফতার আবু জাফর ও সেক্রেটারি হিসেবে শহিদুল ইসলাম লিটন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেন সমিতির সদস্য হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চিংড়ি ঘের এলাকার ৪৮ একর জমির মধ্যে খামার ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। পাশাপাশি চিংড়ি ঘের পাহারার দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

সমিতিতে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জন্য সদস্য রয়েছেন। সমিতির মালিকানাধীন চিংড়ি ঘেরের সাহারবিলের রামপুর মৌজায় ৫১১২ একরের আরও একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চিংড়ি ঘের সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নিয়ন্ত্রণে না থাকা চিংড়ি ঘের দখলে নিতে গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে গ্রেফতার লিটনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী মহড়া দিতে থাকে। তারা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কয়েকশত রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতার আবু জাফর ও লিটন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেফতার সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিমকে গুলিবর্ষণের দায়িত্ব দেয়। পরবর্তীতে গত ৯ জানুয়ারি সকাল ১১টায় লিটনের নির্দেশে মোবাইলে ফোন করে কৌশলে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে চিংড়ি ঘের এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে হোসেন দুপুরের পর বাড়ি ফিরতে চাইলে লিটন ও তার সহযোগীরা রাতে মিটিং আছে জানিয়ে তাকে ফাঁকা জায়গায় নির্মিত ঘরে কৌশলে আটকে রাখে। পরে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।

৯ জানুয়ারি  দিবাগত রাতে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে ওই চিংড়ি ঘেরের পাশে লবণ চাষের খালি জমিতে নিয়ে গিয়ে লিটন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সোহেল ও তার সহযোগীরা ডাকাতির নাটক সাজিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।

জব্দ করা মোবাইল ফোন ও টাকা

পরে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডটিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালায় এবং হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশিত হলে গ্রেফতারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়।

গ্রেফতারদের পরিচয়

র‌্যাব বলছে, শহিদুল ইসলাম লিটন স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে জ্বালানি তেলের ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে সে ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির’ সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়। ওই চিংড়ি ঘেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য সে এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল গঠন করে। এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দলের মাধ্যমে অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল সে। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দস্যুতা, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ ৭টির বেশি মামলা রয়েছে।

সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে লিটনের নির্দেশে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে নৃসংশভাবে হত্যা করে। সোহেলের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় হত্যা, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মারামারিসহ ৭টির বেশি মামলা রয়েছে। আবুল হোসেনের নামে চকরিয়া থানায় হত্যা, মারামারিসহ ৪টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত রহিমের নামে চকরিয়া থানায় একটি মারামারির মামলা রয়েছে।

/কেএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
কষ্টিপাথর কিনে প্রতারিত হয়ে অপহরণ, গ্রেফতার ৭
পিকআপ চাপায় র‌্যাব সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় চালক গ্রেফতার
২০০১ সালে আলোচিত সেই ধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
লাপাতা লেডিস: বিস্ময় জাগানো কে এই তরুণ
লাপাতা লেডিস: বিস্ময় জাগানো কে এই তরুণ
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রেখে পুরস্কার পেলো সানশাইন ব্রিকস
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রেখে পুরস্কার পেলো সানশাইন ব্রিকস
তরমুজের ললি আইসক্রিম বানাবেন যেভাবে
তরমুজের ললি আইসক্রিম বানাবেন যেভাবে
পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রতি ইতালির আহ্বান
পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রতি ইতালির আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?