প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছিল আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিশ অ্যান্টেনার সংযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরুল হক। এক ব্যক্তি তাকে এই কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিল। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সে এই তথ্য জানিয়েছে।
র্যাব জানায়, ডিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সেলিমের সঙ্গে বিরোধ চলছিল নুরুল হকের। এ অবস্থায় ঢাকার মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে প্রতিপক্ষ সেলিম পরিচয়ে হুমকি দিলে ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায় তার কোনও প্রতিবন্ধকতা হবে না, উল্টো সেলিম বিপদে পড়বে, এমন পরামর্শ পেয়ে হুমকি দেয় সে। নুরুল স্থানীয় কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খলিলের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব-৪-এর একটি দল ঢাকার আশুলিয়া থেকে মো. নুরুল হক (৬৭) ও তার অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ ইমনকে (২২) গ্রেফতার করার তথ্য জানায়। খলিলের কাছে চাঁদা দাবি ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাদের।
গ্রেফতারকৃত দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস ক্রয় কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গত ১৯ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শাজহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতান’-এ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করেন, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
মঈন বলেন, খলিলের দেখাদেখি আরও কিছু ব্যবসায়ী প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। পরে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদফতর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় যেসব মাংস ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রি করেন, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। এছাড়া কিছু দিন আগে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ীর খুন হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
গত ১৮ জানুয়ারি খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে অপর একটি মোবাইল নম্বর থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুদিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ গালিগালাজ করা হয়। এছাড়াও খলিল এবং তার ছেলেকে হত্যা করার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা ও মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এরপর গত ২০ জানুয়ারি শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন খলিল। পরে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয় এবং জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হুমকির ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসা করে আসছে। এলাকায় তার প্রায় ৫০০ গ্রাহক রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলছে। কিছু দিন আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের মোবাইল নম্বর দিয়ে তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলে। এতে তার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনও বাধার সম্মুখীন হবে না বলে জানানো হয়।
তিনি বলেন, নুরুল হক গত ১৮ জানুয়ারি খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে হত্যার হুমকি দেয়। চাঁদা দাবির পাশাপাশি সে তার প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করে। একই দিনে ইমনকে একটি ফোন ধরিয়ে খলিলকে গালাগালি করতে বলে। এছাড়াও ইমন ব্যবসায়ী খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা ও মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। পরে সে ওই মোবাইল ফোন ও সিমকার্ডটি পানিতে ফেলে দেয়।
নুরুল হক ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজও করে। বিভিন্নজনকে হুমকি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে সে জড়িত বলেও র্যাব জানতে পেরেছে। তার নামে আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি এবং মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত ইমন দীর্ঘদিন যাবৎ নুরুলের ব্যবসা ও বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।
হুমকির নেপথ্যে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রির সিন্ডিকেটের কোনও সদস্যের ইন্ধন ছিল কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, গত রাতে অভিযানের পর আশুলিয়ার স্থানীয় অনেক মাংস ব্যবসায়ী আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের কারও ইন্ধন ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি কে বা কারা খলিলকে হুমকি দিতে বলেছিল, তাদের শনাক্তের চেষ্টাও চলছে।
