অমর একুশে বইমেলা শেষ প্রান্তে। চলতি সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে প্রাণের মেলা। বরাবরের মতো এবারও শেষ দিকে বেড়েছে বিক্রি। কারণ সাহিত্যপ্রেমীরা মেলার শুরু থেকে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে তালিকা সংগ্রহ করে শেষ দিকে এসে বই কেনেন।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে তালিকা ধরে ধরে বই কিনছেন পাঠকরা। এক প্রকাশনী থেকে বই সংগ্রহ শেষে ছুটছেন অন্য প্রকাশনীতে। তাদের অনেকেই পছন্দের বই কিনতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আবার অনেককেই দেখেশুনে বই কিনতে দেখা গেছে। তরুণ পাঠকদের মধ্যে ক্যাটালগ ছাড়াও ভালো মানের বই কিনতে দেখা গেছে।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহ্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের এখানে উপন্যাস, রাজনীতি, ইহিতাস, গল্প, সায়েন্স ফিকশনের বইগুলো ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এ ধরনের বইয়ে পাঠকের অনেক আগ্রহ দেখেছি। এ ছাড়া পাঠকরা তাদের পছন্দমতো বইও কিনছেন। অনেকেই সংগৃহীত ক্যাটালগ থেকে তাদের পছন্দের বইটি খুঁজছেন। আবার অনেকেই প্রচ্ছদ বা বইয়ের সূচিপত্র দেখে বই কিনছেন। তবে এখন তালিকা ধরে বই কেনার প্রবণতা অনেক বেড়েছে।
বইমেলার মাঝামাঝি পার হয়ে বর্তমানে যারা মেলায় আসছেন, তারা মূলত বইয়ের ক্রেতা। এমনটিই জানিয়েছেন মৃদুল প্রকাশনের প্রকাশক এম সহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অনেক পাঠক এখন আমরা পাই যারা আগে থেকেই নানা বিষয় মাথায় নিয়ে আসেন। আমাদের প্রকাশনা থেকে প্রবন্ধের বই বেশি। তবে বর্তমানে ‘ইতিহাস’, ‘রাজনীতি’ বিষয়ক বইগুলো লিস্ট করে নিয়ে এসে পাঠকরা সংগ্রহ করছেন।
এ বিষয়ে আগামী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাজিদ হোসেন বলেন, বইমেলা জমে মূলত ১৫ বা ১৬ তারিখের পর থেকে। মূলত বইয়ের আসল পাঠকরা এই সময়টায় এসে বই নিয়ে যান। বইমেলার শুরুতে নতুন বইয়ের সবগুলো আসে না। মেলার মাঝামাঝি প্রায় সব বইই স্টলে চলে আসে। অনেকেই পছন্দমতো বই কেনেন। আবার অনেকেই এ বছরের ক্যাটালগের বইগুলো আসছে কি না, জানতে চান।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা ইশরাত জাহান বলেন, মেলার শুরুতে একবার এসে ঘুরে গেছি। তখন স্টলগুলো থেকে ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছিলাম। এখন পছন্দ করা বইগুলোর তালিকা ধরে ধরে কয়েকটি বই কিনেছি। হয়তো মেলার শেষের দিকে আরেকবার এসে বই কিনে নিয়ে যাবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাইম বলেন, মেলার শুরুতে দু-একটি বই কিনলেও এখন পছন্দের তালিকা থেকে বই কিনতে হচ্ছে। কারণ, পকেটে টাকা থাকাটাও বই কেনার জন্য একটি বড় বিষয়। বইমেলার শেষে নিজের পাছন্দের অন্তত ১৫টি বই কিনবেন বলেও জানান তিনি। এখন পর্যন্ত রাজনীতি, ইতিহাস ও নন-ফিকশন গল্পের তিনটি বই কিনেছি।
নতুন বই
অমর একুশে বইমেলায় শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নতুন বই এসেছে ১৩৮টি।
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ মোহাম্মদ রফিক ও স্মরণ। খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ ও সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন তাদের সাহিত্য প্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে তারা এই দেশ ও গণমানুষের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পালনের চেষ্টা করেছেন। নুতন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা ও ইতিবাচক মনন গঠনে তাদের সাহিত্যকর্ম অপরিসীম ভূমিকা রাখবে।
লেখক বলছি
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক শাহনাজ পারভীন, কবি ও অনুবাদক সাইফুল ভূঁইয়া, কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন স্মৃতি ও গবেষক মনিরুজ্জামান শাহীন।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন
এদিন বিকালে মঞ্চে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জি, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ ও তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই মণ্ডল ও সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী।
এ ছাড়া ছিল আসাদুজ্জামান মান্নার পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ', মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'পরম্পরা নৃত্যালয়', মাহবুব রিয়াজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী' এবং হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় 'ঘাসফুল'-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার ও ঝর্ণা রায় ভাবনা।
রবিবারের সময়সূচি
রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশ নেবেন তানভীর নেওয়াজ ও মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।